মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০

 আকাশের ক্যানভাসে আঁকা এক ছবি

_______________________________
শেষ বিকেলের মিষ্টি নরম আলোয়,
চঞ্চল মেঘের দল আবির মেখে লাল।
সেই রূপবতী মেঘ দেখে হঠাৎ আমার ইচ্ছে হলো
এবার আঁকবো আমার স্বপ্নগুলো আকাশের ক্যানভাসে।
এই ভাবনার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলো মাতাল দখিনা হাওয়া।
বলল,
রংতুলি হবো আমি তোমার ক্যানভাসে
ফুলেরা বলল,
আমরাই বা বাদ যাই কেন? আমরা হবো নানান রকম রং।
সময় গড়িয়ে পূর্ব আকাশে জাগলো রূপালী এক চাঁদ।
সে প্রশ্ন করলে, কি হে ভাবুক ছেলে?
মনে দেখি লেগেছে হাজার রং।
কোথায় তোমার ক্যানভাস মেলাও তো দেখি
সেথায় কিছু জোছনা বিছিয়ে দেই।
যেই বলা সেই কাজ,মেললাম ক্যানভাস,
ওমা কোত্থেকে এলো হাজার জোনাকি।
বলল,আমরা আছি, আমরা আছি!
ক্যানভাস জুড়ে ছড়িয়ে হাজার আলো, বাঁধালো এক ভীষণ হুটোপুটি।
এ যেন মর্ত্যের বুকে আলো ঝলমল তারকারাজির মেলা
আমি মুগ্ধ হয়ে অবাক চোখে দেখি।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

--------
একদিন ঠিক পৌঁছে যাবো তোমারও দ্বারে
____________________________________
চলে যাবে বলেছিলে কোন একদিন।
অকস্মাৎ ত্র্যহস্পর্শের কালে গেলে অজ্ঞাত বাসে।
সত্যি সত্যি আর ফিরবেনা, তাতো বলোনি।
কে জানে কেন তুমি স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলে?
এদিকে এখন আমি একলা একা থাকি।
অসীম অনন্তে,দিক দিগন্তে তোমায় খুঁজতে থাকি।
অবশেষে তোমার দেখা পেলাম একদিন।
স্ফটিক স্বচ্ছ কপোতাক্ষ নদের জলে।
যেমন তুমি পড়তে কালো টিপ,মধ্য সিঁথি বরাবর দুই ভ্রুর ঠিক মাঝখানে।
নীলাম্বরী শাড়িতে এখনো তুমি জাগ্রত দেবী সম,আমার হৃদয় জুড়ে।
আমি মুগ্ধ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখলাম অপলক।
কি সতেজ! আজ অবধি বকুল গুলো তোমার করবীবন্ধনে,
আহ! আমি ঠিকই পাচ্ছি সুবাস এতোটা দুর হতে।
জানো কিনা জানিনা এখনো আমার ভাবনাগুলো আবর্তিত হয় কেবলই তোমায় ঘিরে।
আমি যে এখনো বিহ্বল, সেই প্রথম দিনের মতো তোমার রূপ মাধুরিতে।
গ্রীষ্মের তাপদহ, বর্ষার বারিধারা, শরতের স্নিগ্ধ হাওয়া, হেমন্তের হৈমন্তী রং,শীতের মিষ্টি কোমল রোদ,বসন্তের বাসন্তী বাতাস আসে ঋতু চক্রের আবর্তে যথানিয়মে, পালাক্রমে।
শুধু তুমি আসো না ফিরে।
একাকী জীবনে রাত নিশিথে দুর কোথা হতে ভেসে আসে ভায়োলিনের করুন সুর।
আমার বিষন্ন প্রহরকে করে তোলে আরো বিষন্ন।
তবুও ভালো আছি প্রিয়তমা, বিষন্নতা আমার ভালোই লাগে।
ভালো লাগে এই একাকীত্ব।
ভালো লাগে তোমার প্রতি আমার ধ্যান মগ্নতা।
চলে গেছো সময়ের হাত ধরে,
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে হয়তো।
তাতে কিছু যায় আসে না আর,
দিয়ে গেছো যত ভালোবাসা,যত মধুর স্পর্শ।
সেই সব স্মৃতি রোমন্থনেই কাটাবো সকল প্রহর।
এভাবেই রয়ে যাবো যতটা দিন বাঁচি।
জানি অবশেষে একদিন চলতে চলতে পৌঁছে যাবো ঠিকই তোমারও দ্বারে।
জানি আমি জানি।
সেই সব দিনগুলি হবে মর্ত্যলোকের চেয়ে আরো বেশি স্বপ্নিল ও বর্ণাঢ্য।
সেথা রবো শুধু তুমি আর আমি।
আর নয় কেহ।
আর কেহ নয়।।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
 


শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

 https://www.facebook.com/Akash9679897237/

কেন এই প্রত্যাখ্যান

 কেন এই প্রত্যাখ্যান

*****************
এড়িয়ে যাবে বলে ঠিকানা দিয়েছিলে ভুল।
তাতে আমি বিচলিত নই একচুল।
একসময় তোমার কিছু প্রশ্রয় ছিলো।
তার কারণে এই মন তোমাতে হারালো।
তোমার মধ্যে কিছুটা আশ্রয়ও ছিলো।
আমার আশাগুলো সেথা বাসা বাঁধলো।
হঠাৎ অলীকের পথে হাত বাড়ালে,
নিষ্পাপ তুমি কিছুটা লোভী হয়ে গেলে।
হঠাৎ আঘাতে বেশ উশৃংখল হলাম।
অকারণ কিছু ঝামেলাও জড়ালাম।
জানতে সাধ হয় কেন এই প্রত্যাখ্যান
দরিদ্র বলেই কি এই চরম অপমান?

ভালোবাসা সেতো থাকে অন্তরে অন্তরে

 ভালোবাসা সেতো থাকে অন্তরে অন্তরে

**********************************
একদিন যদি হারিয়ে যাই
গভীর গোপনে।
তুমি কি তখন অনুভবে আমার বৃষ্টি হয়ে ঝরবে?
আমি জানি ঝরবে।
কি হয় পায়ে যদি নুপুর না থাকে?
না থাকে নাকছাবি,চুড়ি অথবা লাল শাড়ি।
তাতে কি প্রেমের মরণ হবে?
হবে না'কো হবে না।
মনের মরণ হয় না'কো কখনো।
হৃদয় যেখানে হারিয়ে গেছে ঝুম প্রণয়ে,
সেখানে কি এতো সহজ ভালোবাসার মরণ?
ভালোবাসা মরে না'কো সিঁথির সিঁদুর মুছলে।
ভালোবাসা মরে না'কো কঙ্কন ভাঙলে।
ভালোবাসা মরে না'কো সাদা থান পরলে।
ভালোবাসা সেতো থাকে অন্তরে অন্তরে।
১২ আগস্ট ২০২০
--------------------------------------------------------------------------
Waiting for you
_______________
One day I was sitting alone,
waiting for you.
I am still sitting alone,
waiting for you.
১২ আগস্ট ২০২০
-----------------------------------


শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

গল্পঃ মে ২০২০

গল্পঃ পথের মাঝে একদিন
**************************
পথের মধ্যে স্যান্ডেলটা ছিড়ে গেলো।চরম বিরক্তি নিয়ে নীলা অন্য পাটি স্যান্ডেলের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো।একটা দীর্ঘশ্বাস নেমে এলো তার বুক চিরে। তারপর কি না কি ভেবে ছেড়া স্যান্ডেল জোড়া হাতে তুলল এবং পাশে থাকা ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিলো। নতুন একটা না কিনলেই নয়।একেবারেই গেছে।
ভাগ্যিস বাসার কাছাকাছি ঘটনাটা ঘটল না হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত নিশ্চিত।তবে অসময়ে স্যান্ডেল ছিড়লো বলে তার কপালে খানিক দুঃশ্চিন্তার রেখা দেখা দিলো। মাসের শেষ এখন বাড়তি টাকার খুব আকাল। জোছনার পরীক্ষার ফি দিতে হবে, এক সপ্তাহ ধরে চাইছে।কিন্তু অফিস যেতে হলে স্যান্ডেল তো লাগবেই। হাতে মোটে আছে তিনশত টাকা।কে জানে কি হবে।
একটু আগে বেশ জাকিয়ে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে।প্রকৃতিতে এখন এই রোদ্দুর আর এই মেঘের খেলা চলছে।কি মাস এখন? নীলা মনে মনে ভাবলো, ভাদ্র মাস মনে হয় ,গতকাল মা কি যেন বলছিলো?গরমটা বেশি ছিলো বলে বলছিলো ভাদুরে গরম পড়েছে।
জোরে পায়ে হেঁটে যাবে বলে পা বাড়াতেই কে যেন ডাকলো।
-কেমন আছো নীলা?
গলাটার খুব পরিচিত না তবে কানে এসে বাজলো মনে হয়।ডাকার ভঙ্গীটা বেশ পরিচিত। নীলা ঘুরে দাড়ালোে এবং থমকে গেলো হঠাৎ করেই।
নিয়াজ দাড়িয়ে আছে দুটো বাচ্চা ছেলে সহ,সাথে একজন ভদ্র মহিলা।মনে হচ্ছে এটা তার বউ, নিয়াজ বলল,
-আমাকে চিনেছো তো নীলা?
কোন কোন পরিচিত মুখের সাথে দেখা হলে বিব্রত হতে হয়।নিয়াজ হচ্ছে সেরকমই এক মুখ।নীলার মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো। তবু আর কি করা, কেউ একজন ভালো মন্দ জিজ্ঞসা করলে কথা বলতে হয়।এটা স্বাভাবিক ভদ্রতা।সে ভালো হোক আর মন্দ হোক।
নীলা মাথা নিচু করে বলল ,
-ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন?
-হ্যাঁ ভালো আছি, আগে তো আপনি করে বলতে না ,এখন আপনি করে বলছো যে,আমার সাথে লজ্জা। হা হা হা.... এখানে কোথায় থাকো? তোমার বাসা কি কাছেই নাকি?
নীলা বলবে কি বলবেনা ভাবতে ভাবতে মুখ ফসকে বলে ফেলল,
-হ্যাঁ কাছেই।
-এতোদিন পরে দেখা তোমার বাসায় ইনভাইট করবে না?
নীলা ইতস্তত বোধ করতে লাগলো। কি জন্য যে এই লোকটার সাথে তার দেখা হলো আল্লাহই জানে।কথার ফাঁদে ফেলে পাশ কাটানোর শেষ চেষ্টা স্বরুপ সে বলল,
-আপনার সাথে ইনি কে?
-এর নাম শীলা । হা হা হা .... কেমন মিল না, তোমার নামের সাথে? তোমার থেকে বয়সে তো ছোট হবে আবার সস্পর্কেও ,শীলা সালাম করো, সম্পর্কে বা বয়সে তোমার বড় যেহেতু ওকে তুমি বড় আপা বলতে পারো । নীলার এতোটাই বিরক্ত লাগছিলো যে কি আর বলবে।
এখান থেকে পালাতে পারলেই সে বাঁচে। নিয়াজকে সে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে। এখনো পায়।সত্যি বলতে নিয়াজের পুরো পরিবারকে সে ভয় পায়। গুন্ডা মাস্তানের পরিবার। ভয়ের কারণও আছে। এখনো তার সেই ভয় কাটেনি।তার বুকের মধ্যে টিপ টিপ করতে লাগলো।
-তারপর কি খবর?
-এই আছি?
-এই আছি মানে কি? বর কি করে?
- বিয়ে? বিয়ে তো করিনি।
-নাকি হয়নি?একা থাকো, অন্য কোন কিছু করো নাকি?
নীলা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কথাটার ভিতর একটা সুক্ষ খোচা আছে। এই পথে লোক চলাচল কম। নিয়াজ হয়তো দিন দুপুরে তাকে কিছু করবে না। তাছাড়া মানুষ যত খারাপই হোক না কেন? নিজের বউ বাচ্চার কাছে নিজের ইমেজ খারাপ করবে না। নিয়াজ তো বুদ্ধিমান। সে নিশ্চয় সে রকম কোন খারাপ আচরণও করবে না। মন চাইছে এখান থেকে এক ছুটে সে পালায়।
-পেছনে কি দেখো?
-কিছু না।
এইবার নিয়াজের সাথে থাকা মেয়েটি বলে আপা আপনে কেমন আছেন?
বড় আপা আপনের কথা নিয়াজগো বাড়িত শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা।আপনের খুব প্রশংসা আমার শ্বশুর বাড়িত।
নীলা কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভুলে যাওয়া অতীত থেকে পালিয়ে বাঁচতে এই শহরে আসা । ভাগ্যচক্রে এখানেও সেই অতীত এসে হাজির।তার সাথে সবসময় এরকম কেন হয়?
মেয়েটি বলে চলে।আপনেরে ও এতো ভালোবাসে যে আপনের সংঙ্গে মিলাইয়া আমার নাম রাখছে। আচ্ছা আপা আপনে কেন চইলা আইলেন? মায়ে আর আব্বায় কিন্তু এহনো আপনের গুনগান গায়।
আপনেরে কিন্তু হেরা বহুত খুঁজছে।
নীলা কিছু না বলে হাটা শুরু করলো। বিভসৎ অতীতের কাছাকাছি থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়াই ভালো। নিয়াজ ভালো থাক তার বউ বাচ্চা নিয়ে। সে নিয়াজের বাড়ির বউয়ের অধিকার আর ফিরে পেতে চায় না। সে আর অত্যাচারিত হতে চায় না।
**********************************************************************************************
লাশ ১ম পর্ব
*****
বেশ আঁধার থাকতে থাকতে মহী বিছানা ছাড়ে। আজ সারা রাত প্রচন্ড গরম পড়েছে। জানালা ,ঘরের দরজা সব হাট করে খোলা তবু অনবরত হাত পাখা ঘুরাতে ঘুরাতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে ।
কাজলীর মা আবার গরম একটুও সহ্য করতে পারে না। কাজলীর ও ঘুম খুব পাতলা। শেষ রাতের দিকে হালকা একটু তাপ কমতেই মহী বিছানা ছেড়ে ওঠে।মা মেয়ে দুজনেই ঘুমাচ্ছে। বাইরে বাঁশের চৌকিতে এসে গা এলিয়ে দেয়।
নাহ! কোথাও একটু শান্তি নেই। গা চিড়বিড় করছে গরমে। গোসল করলে মনে হয় শরীরটা একটু জুড়াতো।কিন্তু বিনা কারনে সাত সকালে গোসল করলে কাজরীর মা আবার বকা বকি শুরু করে দেবে।
লোক জনের তোয়াক্কা না করেই বলবে,
-কিছু হইছে নাকি, সকাল সকাল গোছল মারাইছো? লোকে দেখে না ? কি না কি ভাববো সেই জ্ঞান টুকু আবার কবে হইবো। সাত দিনে একদিন কোন কাজ নাই আবার গোসল। আমি বইলা তোমার ঘর করি।অন্য মাগী হইলে দিতো ...............
হঠাৎ ধড়মড়িয়ে ওঠে মহী ,তাইতো আম পেকেছে যে! উত্তর পাড়ার মাঠের ধরে জঙ্গলের আম গাছ তলায় গিয়ে দেখলে হতো।বুড়োদের আমলের। বেশ ভালো ভালো জাতের আম।
বেলা এখন ভালোই ফুটে গেছে। যেই ভাবা সেই কাজ মহী উঠে দাড়ালো, যাবার আগে হাতে করে বদনা নিতে ভুল করলো না সে। জঙ্গলের ভিতরে মলমুত্র ত্যাগের মজাই আলাদা,অন্য রকমের শান্তি। বাড়িতে স্যানিটরী ল্যাট্রিন এ দম বন্ধ হয়ে আসে তার।কিন্তু পুকুরের জলে শৌচকার্য সারতে খানিক দ্ধিধা আছে তার ।
কিছুক্ষনের মধ্যে বদনা হাতে করে ,মাজায় গামছা বেধে, বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় তার গন্তব্যে উদ্দেশ্যে। এদিকে লোক সমাগম সবসময়ই কম।এই এলাকাটা ভুতুড়ে বলেও বদনাম আছে।
নিজের কাজ শেষে আম কুড়াতে কুড়াতে সে এ গাছ ও গাছ ঘোরা ঘুরি করে । এখনো সেভাবে আম পাকেনি তবু সে গোটা বিশেক আম পায় । আমগুলো গামছায় মুড়ে ঘুরতে গিয়ে কিসের যেন খসমসে আওয়াজে তাকাতেই তার পিলে চমকে যায় একি!
*************
লাশ
*****
[২]
ঘন পাতার ফাঁকে খুব একটা ভালো দেখা যাচ্ছে না ।কিছু পাতা সরিয়ে ভালো করে চাইতেই বোঝা গেলো, কি যেন একটা নড়াচড়া করছে আর সেই সাথে করুণ সুরে কাতরানোর আওয়াজ।মহী নিজের অজান্তে মুখ খুলল,
-একি! মানুষ না?
হ্যাঁ এতো মানুষেরই গলার আওয়াজ।
আরো ভালো করে উঁকি মারতেই মহী থমকে গেলো।
কি আশ্চর্য এতো কুলসুম! রাকিবুলের মেয়ে কুলসুম কি করে এখানে এলো? আর ওর এই অবস্থাই বা কি করে হলো? কে করেছে এই সর্বনাশ?কে?
প্রথম অবস্থায় মহী ভাবলো গগন বিদারী এক চিৎকার দেবে। কিন্তু কেন জানি তার নিজের কণ্ঠ তার নিজের সাথেই বেইমানী করলো।সে দুই একবার গলায় হাত বুলালো।না কোন কাজ হলো না ।কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না সেখান থেকে। এতে করে তার আতঙ্ক বেড়ে গেলো।
কি না কি ভেবে সে উদভ্রান্তের মতো দৌড় লাগালো গায়ের দিকে। মুখ দিয়ে গোঙরানি মতো আওয়াজ করে আর হাত নেড়ে, পথ চলতি লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাগলো।
গ্রামের রাস্তায় এতো সকালে সেভাবে লোকজন নেই তবু গুটি কয়েক লোকের সাথে তার দেখা হয়ে গেলো। মুখ তখনো ফোটেনি তার চোখ দুটিতে রাজ্যের বিষ্ময়।হাতের আর গোঙরানির আওয়াজে অনেকেই বিরক্ত হলো,ধমকে উঠলোএকজন
-কি কও মিয়া ? ঠিক কইরা কও এমন করতাছো কেন?কি? ওদিকে কি দেখাও?
জামাল নামের একজন মহীর ছোটবেলার বন্ধু সে মহীকে নিয়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে বসালো।সে কিছু না বুঝেও একটু মাথায় পানি দিলো।মুখ ধুইয়ে দিলো।
এখন প্রচন্ড কাজের সময়। ধানের মৌসুম তবু উৎসাহী জনতার আগ্রহ কমে না।পথ চলতি আরো বেশ কিছু লোক জমে যায় সহজেই।
ধাতস্থ হতেই মহী অস্ফুস্ট স্বরে বলল,
-লাশ
-লাশ? সমস্মরে ধ্বণিত হলো । উপস্থিত সকলেই এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।
কি কও?
জামাল বলল,
কোথায় লাশ?
-উত্তর পাড়ার জঙ্গলে।
এ ধরনের ঘটনা এ গ্রামে কেন এ তল্রাটে কেই কোনদিন শোনেওনি দেখেও নি। খুব তাড়াতাড়ি ছোটখাটো একটা দল চলল উত্তর পাড়ার জঙ্গলের দিকে।যদিও মহীকে তারা খুব একটা বিশ্বাস করছে না।মহীকে তারা আধ পাগলা বলেই জানে।
আজিজ মাষ্টার তার কোচিং সেন্টারে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলো।সে হঠাৎ থেমে দাড়ায়।এতোগুলো লোকের চলাচলে সেও খানিক উৎসাহী হয়। কি হয়েছে জানতে সেও এদের পিছু নেয়।
আলো অনেকটা ফুটে গেছে,মাঠের কাজে বের হওয়া লোকেরা অতি উৎসাহী হয়ে দলটিকে আরো ভারি করে ফেলল তাড়াতাড়িই ।
কিন্তু ঘটনার জায়গার কাছাকাছি আসতেই সবাই কেন জানি আর এগুতে চাইলো না।
জামাল স্ব উদ্যোগে এগিয়ে গিয়ে আর্ত কন্ঠে চিৎকার করে উঠলো,
- হায় আল্লাহ এতো কুলসুম। রাকিবুলের মাইয়া । এরে কেডায় এই অবস্থা করছে।
কুলসুমের নাম শুনে আজিজ মাষ্টার এগিয়ে গিয়ে দৃশ্যটি দেখে এবং হঠাৎ করেই জ্ঞান হারায়।
চলবে।

মে ২০২০ সংকলন

ক্ষুধা
*******
এক মুঠো ভাত দেবেগো মা ?পেটে বড্ড ক্ষুধা ।
পয়সা হলেও অসুবিধা নেই, দাও না গো দাদা।
দুদিন ধরে খেয়েছি কেবল, পানি আর একমুঠো মুড়ি।
অনেক তো আছে কমবেনা দিলে,বাসি ভাত তরকারী।
রোদে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, নেই তাতে কোন দুখ।
ক্ষুধা জ্বালা বড় জ্বালা, অসহ্য মারাত্মক অসুখ।
দালান চাই না ,চাইনা গো ভাই, তোমাদের দামি পোষাক।
দু”মুঠো দাও, তাতেই খুশি, সুখ তোমাদেরই থাক।
#সামনে ইদ আমরা কি ভাবছি এসব ছিন্নমুল মানুষের কথা।
****************************************************************
সার্থকতা
************
জীবনের এতোটা পথ হেটে এসে
পেছন ফিরে দেখি আমি একা।
চলার পথে যারা ছিল অতি আপনজন
তারা সকলে প্রয়োজন মিটতেই,
হারিয়েছে দূরে কোথাও ।
কষ্ট পাইনা,কষ্ট পেতে পেতে
কষ্ট কি সেই অনুভূতিটুকুও নষ্ট হয়ে গেছে।
তারপরেও সহায় কেউ থাকলে
মনের জোর টুকু বাড়তো।
বেলা শেষে ভালোবাসার অবলম্বন টুকু যে বড্ড প্রয়োজন!
এখন খুব সহজেই ঠান্ডা গরমে হাঁপানির টান ওঠে।
উঠতে বসতে গাঁটে গাঁটে ব্যথা।
চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো প্রায়।
কানও বিভ্রান্ত কখনো কখনো।
পথ চলতে পা টলে সহজে।
আরো কত কি!
এতো দিনের বিনিময় মূল্য ভালোই পেলাম
জীবনের কাছ থেকে।
একটু আদর আহ্লাদ
একটু সহানুভূতি, একটু ভালোবাসা।
সব মনে হয় রূপকথা, অলীক স্বপ্ন।
তবু বেঁচে আছি।
বাঁচতে ভালোবাসি।
এখানেই হয়তো জীবনের সার্থকতা।
*************************************************************
আমফান
*********
মেঘেরা ভেসে ভেসে
ডানা মেলে পাখা।
ছুটোছুটির ব্যস্ততা
দূরে একা একা।
দানবীয় শক্তিতে
সমুদ্র উত্তাল।
নাগরিক জীবনের
অবস্থা বেহাল।
পত্র পল্লব সব
মাথা দুলে দুলে।
অসহায় সমর্পণ
প্রকৃতির কোলে।
আকষ্মিক জোয়ারে
ভাসে বাড়ি ঘর।
স্বাভাবিক জীবন কি
ফিরবে এরপর?
নীড় হারা পাখিদের
ছোটাছুটি ভয়ে।
কোথা যাবে এরপর
শেষ আশ্রয়ে?
মাঠের ফসল যত
নিমেষেই শেষ।
গৃহস্থের চোখে জল
দুঃখ অনিঃশেষ।
অসহায় প্রানীকুল
ভয়ে কেঁপে সারা।
আশ্রয়ের খোঁজে
ক্ষিপ্ত দিশেহারা।
হুড়মুড় বৃষ্টির
মহাতান্ডবে।
সকলের সুখ সাধ
এবার ফুরাবে।
কোন কোন দূর্যোগ
কারো কারো তরে।
সৌভাগ্য বয়ে আনে
ধরনীর উপরে।
দশেরে দিয়ে লাথি
কেউ ধনী হয়।
নিঃস্ব আরও ক্রমশ
হয় অসহায়।
আমফান তুমি
ছাড়ো রুদ্র মুর্তি।
অসহায়ের পক্ষ হতে
রইলো এ আর্তি।
************************************************


********************************************************

তুই

তুই আমার কবিতা হবি
স্বপ্ন দেখার মতো?
ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নেবো
যত খুশি তত।
মাঝে মাঝে পড়বো তোকে
পাতা খুলে খুলে।
নানা স্মৃতি নানা কথায়
হৃদয় উঠবে দুলে।
হবি কি তুই বাঁশের বাঁশি
বুকের টানা দম?
তোকে আমি সুরে সাজাবো
নানান রকম।
হবি নাকি গল্প কোন
ভীষণ রকম প্রেমে ।
আলতো ছোঁয়ায় গাঁথবো
চমৎকার ফ্রেমে।

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক  

******************************************

বৃষ্টি তোমায় ভালোবাসি নিজের মতো করে
******************************************
এলোমেলো অনুভূতি
পূর্ণ কলেবর জুড়ে ,
ফিরলে আবার তুমি
নিজের মতো করে।
ছুঁয়ে গেলে প্রতি ফোঁটায়
উল্লসিত মন,
বহুদিনের পর যেন
ফিরলো আপনজন।
এমন করে দিক ভুলে
এলে তো বেশ হয়,
উষ্ণদিনে তোমার অযোগ
কাটেনা সময়।
বৃষ্টি তোমায় ভালোবাসি
নিজের মতো করে,
খোলা ছাদে দাড়িয়ে থাকি
তোমার বিরহে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
**********************************************

মেঘ ভাসি দিন
স্বপ্ন রঙিন।
স্মৃতির কাব্য লেখে
মনের গহীন।
কোথা তুমি মন
ব্যস্ত জীবন।
হেরে গেছি ভেবোনা
লড়ছি এখন।
ছিলো যত ভুল
ঝরা বকুল
সব শেষে ফোটে ফের
নতুন মুকুল।
আধারের গান
হোক অবসান।
নব রবি ঊষালগ্নে
হাসে অম্লান।
************************************************************
রম্য কবিতা ১
**************
কত রাত জেগে জেগে
লিখেছিনু পদ্য
বউ বলে কিযে করো
এতো সব গদ্য।
আমি বলি বুঝবে না
অরবাচীন মূর্খ।
শুধু শুধু এই রাতে
করো কেন তর্ক।
বুঝবোনা বলো কেন
জানি না করো কি?
ফেসবুকে রাতদিন
মেয়েদের দেখা দেখি।
শুনে আমি বলবোকি
হই বাকরুদ্ধ।
চুপচাপ শুয়ে পড়ি
চাই নাকো যুদ্ধ।
**********************************************************
(১)
শুনশান নীরবতা
চারদিক চুপচাপ।
একমনে সুর তোলে
বৃষ্টির টুপটাপ।
(২)
আয়রে তোরা দেখবি যদি
আয়রে সকল আয় ছুটে।
হেলেদুলে নেচেকুদে
যাচ্ছে কেমন ঝাঁকামুটে।
(৩)
ছোট্ট খোকন ভর দুপুরে
এদিক ওদিক পান ধায়।
অবশেষে সত্যি কি সে
রাজকন্যার দেখা পায়?
(৪)
পটল লতা পটল লতা
ফুলটি তোমার সাদা রং।
কেন তুমি রঙিন নও
কেন তুমি দেখাও না ঢং।
*********************************************************
কানামাছি খেলা
***************
এমন হাসি হাসো কেন?
আমি হয়ে যাই মুগ্ধ।
এমন ব্যথা দাও কেন?
আমি পুড়ে হই দগ্ধ।
তোমার চুলের মিষ্টি গন্ধ
দোলনচাঁপা ফুল যেন।
তোমার আমার সম্পর্কটা
এমন লুকানো কেন?
কবে তুমি ছাড়বে বলো
এমন লুকোচুরি খেলা।
ভাল্লাগেনা সত্যি বলছি
অসহ্য এ ঝামেলা।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
********************************************

গীতি কবিতা- ৪

বলবো কি করে দ্বিধা ছিলো, আমি বলিনি। তুলবো তুলবো করে, ছবিও তুলিনি। ক্যানভাসে আঁকবো বলে, মনে আঁকিনি। বুকের ভিতর আছো ভেবে, স্মৃতিতে রাখিনি। কে তুমি নন্দিনী, ভাবনায় আসো যাও। বিরহ জ্বালায় জ্বালিয়ে, আমাকে পোড়াও। প্রিয়তম হতে চাই, ভালোবাসা দাও। স্বপ্নে জাগরণে, কাছে টেনে নাও। রাখিনি তোমায় আমি, স্মৃতিতে রাখিনি। তুলবো তুলবো করে, ছবিও তুলিনি। এলোকেশী বলোনা, নাম বলো না। পরিচিত হতে চাই নয়তো ছলনা । কাছে আসো ভালোবাসো, দাও ধরা দাও। নিবিড় করে আমায় তুমি কাছে টেনে নাও। মনের মধ্যে রাখবো তোমায়,সৃতিতে আঁকবো। বলবো তোমায় মনের কথা পাশে থাকবো। বলবো কি করে দ্বিধা ছিলো, আমি বলিনি। তুলবো তুলবো করে, ছবিও তুলিনি। ক্যানভাসে আঁকবো বলে, মনে আঁকিনি। বুকের ভিতর আছো ভেবে, স্মৃতিতে রাখিনি। [sb]© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক[/sb]