শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

গল্পঃ মে ২০২০

গল্পঃ পথের মাঝে একদিন
**************************
পথের মধ্যে স্যান্ডেলটা ছিড়ে গেলো।চরম বিরক্তি নিয়ে নীলা অন্য পাটি স্যান্ডেলের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো।একটা দীর্ঘশ্বাস নেমে এলো তার বুক চিরে। তারপর কি না কি ভেবে ছেড়া স্যান্ডেল জোড়া হাতে তুলল এবং পাশে থাকা ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিলো। নতুন একটা না কিনলেই নয়।একেবারেই গেছে।
ভাগ্যিস বাসার কাছাকাছি ঘটনাটা ঘটল না হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত নিশ্চিত।তবে অসময়ে স্যান্ডেল ছিড়লো বলে তার কপালে খানিক দুঃশ্চিন্তার রেখা দেখা দিলো। মাসের শেষ এখন বাড়তি টাকার খুব আকাল। জোছনার পরীক্ষার ফি দিতে হবে, এক সপ্তাহ ধরে চাইছে।কিন্তু অফিস যেতে হলে স্যান্ডেল তো লাগবেই। হাতে মোটে আছে তিনশত টাকা।কে জানে কি হবে।
একটু আগে বেশ জাকিয়ে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে।প্রকৃতিতে এখন এই রোদ্দুর আর এই মেঘের খেলা চলছে।কি মাস এখন? নীলা মনে মনে ভাবলো, ভাদ্র মাস মনে হয় ,গতকাল মা কি যেন বলছিলো?গরমটা বেশি ছিলো বলে বলছিলো ভাদুরে গরম পড়েছে।
জোরে পায়ে হেঁটে যাবে বলে পা বাড়াতেই কে যেন ডাকলো।
-কেমন আছো নীলা?
গলাটার খুব পরিচিত না তবে কানে এসে বাজলো মনে হয়।ডাকার ভঙ্গীটা বেশ পরিচিত। নীলা ঘুরে দাড়ালোে এবং থমকে গেলো হঠাৎ করেই।
নিয়াজ দাড়িয়ে আছে দুটো বাচ্চা ছেলে সহ,সাথে একজন ভদ্র মহিলা।মনে হচ্ছে এটা তার বউ, নিয়াজ বলল,
-আমাকে চিনেছো তো নীলা?
কোন কোন পরিচিত মুখের সাথে দেখা হলে বিব্রত হতে হয়।নিয়াজ হচ্ছে সেরকমই এক মুখ।নীলার মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো। তবু আর কি করা, কেউ একজন ভালো মন্দ জিজ্ঞসা করলে কথা বলতে হয়।এটা স্বাভাবিক ভদ্রতা।সে ভালো হোক আর মন্দ হোক।
নীলা মাথা নিচু করে বলল ,
-ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন?
-হ্যাঁ ভালো আছি, আগে তো আপনি করে বলতে না ,এখন আপনি করে বলছো যে,আমার সাথে লজ্জা। হা হা হা.... এখানে কোথায় থাকো? তোমার বাসা কি কাছেই নাকি?
নীলা বলবে কি বলবেনা ভাবতে ভাবতে মুখ ফসকে বলে ফেলল,
-হ্যাঁ কাছেই।
-এতোদিন পরে দেখা তোমার বাসায় ইনভাইট করবে না?
নীলা ইতস্তত বোধ করতে লাগলো। কি জন্য যে এই লোকটার সাথে তার দেখা হলো আল্লাহই জানে।কথার ফাঁদে ফেলে পাশ কাটানোর শেষ চেষ্টা স্বরুপ সে বলল,
-আপনার সাথে ইনি কে?
-এর নাম শীলা । হা হা হা .... কেমন মিল না, তোমার নামের সাথে? তোমার থেকে বয়সে তো ছোট হবে আবার সস্পর্কেও ,শীলা সালাম করো, সম্পর্কে বা বয়সে তোমার বড় যেহেতু ওকে তুমি বড় আপা বলতে পারো । নীলার এতোটাই বিরক্ত লাগছিলো যে কি আর বলবে।
এখান থেকে পালাতে পারলেই সে বাঁচে। নিয়াজকে সে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে। এখনো পায়।সত্যি বলতে নিয়াজের পুরো পরিবারকে সে ভয় পায়। গুন্ডা মাস্তানের পরিবার। ভয়ের কারণও আছে। এখনো তার সেই ভয় কাটেনি।তার বুকের মধ্যে টিপ টিপ করতে লাগলো।
-তারপর কি খবর?
-এই আছি?
-এই আছি মানে কি? বর কি করে?
- বিয়ে? বিয়ে তো করিনি।
-নাকি হয়নি?একা থাকো, অন্য কোন কিছু করো নাকি?
নীলা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কথাটার ভিতর একটা সুক্ষ খোচা আছে। এই পথে লোক চলাচল কম। নিয়াজ হয়তো দিন দুপুরে তাকে কিছু করবে না। তাছাড়া মানুষ যত খারাপই হোক না কেন? নিজের বউ বাচ্চার কাছে নিজের ইমেজ খারাপ করবে না। নিয়াজ তো বুদ্ধিমান। সে নিশ্চয় সে রকম কোন খারাপ আচরণও করবে না। মন চাইছে এখান থেকে এক ছুটে সে পালায়।
-পেছনে কি দেখো?
-কিছু না।
এইবার নিয়াজের সাথে থাকা মেয়েটি বলে আপা আপনে কেমন আছেন?
বড় আপা আপনের কথা নিয়াজগো বাড়িত শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা।আপনের খুব প্রশংসা আমার শ্বশুর বাড়িত।
নীলা কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভুলে যাওয়া অতীত থেকে পালিয়ে বাঁচতে এই শহরে আসা । ভাগ্যচক্রে এখানেও সেই অতীত এসে হাজির।তার সাথে সবসময় এরকম কেন হয়?
মেয়েটি বলে চলে।আপনেরে ও এতো ভালোবাসে যে আপনের সংঙ্গে মিলাইয়া আমার নাম রাখছে। আচ্ছা আপা আপনে কেন চইলা আইলেন? মায়ে আর আব্বায় কিন্তু এহনো আপনের গুনগান গায়।
আপনেরে কিন্তু হেরা বহুত খুঁজছে।
নীলা কিছু না বলে হাটা শুরু করলো। বিভসৎ অতীতের কাছাকাছি থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়াই ভালো। নিয়াজ ভালো থাক তার বউ বাচ্চা নিয়ে। সে নিয়াজের বাড়ির বউয়ের অধিকার আর ফিরে পেতে চায় না। সে আর অত্যাচারিত হতে চায় না।
**********************************************************************************************
লাশ ১ম পর্ব
*****
বেশ আঁধার থাকতে থাকতে মহী বিছানা ছাড়ে। আজ সারা রাত প্রচন্ড গরম পড়েছে। জানালা ,ঘরের দরজা সব হাট করে খোলা তবু অনবরত হাত পাখা ঘুরাতে ঘুরাতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে ।
কাজলীর মা আবার গরম একটুও সহ্য করতে পারে না। কাজলীর ও ঘুম খুব পাতলা। শেষ রাতের দিকে হালকা একটু তাপ কমতেই মহী বিছানা ছেড়ে ওঠে।মা মেয়ে দুজনেই ঘুমাচ্ছে। বাইরে বাঁশের চৌকিতে এসে গা এলিয়ে দেয়।
নাহ! কোথাও একটু শান্তি নেই। গা চিড়বিড় করছে গরমে। গোসল করলে মনে হয় শরীরটা একটু জুড়াতো।কিন্তু বিনা কারনে সাত সকালে গোসল করলে কাজরীর মা আবার বকা বকি শুরু করে দেবে।
লোক জনের তোয়াক্কা না করেই বলবে,
-কিছু হইছে নাকি, সকাল সকাল গোছল মারাইছো? লোকে দেখে না ? কি না কি ভাববো সেই জ্ঞান টুকু আবার কবে হইবো। সাত দিনে একদিন কোন কাজ নাই আবার গোসল। আমি বইলা তোমার ঘর করি।অন্য মাগী হইলে দিতো ...............
হঠাৎ ধড়মড়িয়ে ওঠে মহী ,তাইতো আম পেকেছে যে! উত্তর পাড়ার মাঠের ধরে জঙ্গলের আম গাছ তলায় গিয়ে দেখলে হতো।বুড়োদের আমলের। বেশ ভালো ভালো জাতের আম।
বেলা এখন ভালোই ফুটে গেছে। যেই ভাবা সেই কাজ মহী উঠে দাড়ালো, যাবার আগে হাতে করে বদনা নিতে ভুল করলো না সে। জঙ্গলের ভিতরে মলমুত্র ত্যাগের মজাই আলাদা,অন্য রকমের শান্তি। বাড়িতে স্যানিটরী ল্যাট্রিন এ দম বন্ধ হয়ে আসে তার।কিন্তু পুকুরের জলে শৌচকার্য সারতে খানিক দ্ধিধা আছে তার ।
কিছুক্ষনের মধ্যে বদনা হাতে করে ,মাজায় গামছা বেধে, বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় তার গন্তব্যে উদ্দেশ্যে। এদিকে লোক সমাগম সবসময়ই কম।এই এলাকাটা ভুতুড়ে বলেও বদনাম আছে।
নিজের কাজ শেষে আম কুড়াতে কুড়াতে সে এ গাছ ও গাছ ঘোরা ঘুরি করে । এখনো সেভাবে আম পাকেনি তবু সে গোটা বিশেক আম পায় । আমগুলো গামছায় মুড়ে ঘুরতে গিয়ে কিসের যেন খসমসে আওয়াজে তাকাতেই তার পিলে চমকে যায় একি!
*************
লাশ
*****
[২]
ঘন পাতার ফাঁকে খুব একটা ভালো দেখা যাচ্ছে না ।কিছু পাতা সরিয়ে ভালো করে চাইতেই বোঝা গেলো, কি যেন একটা নড়াচড়া করছে আর সেই সাথে করুণ সুরে কাতরানোর আওয়াজ।মহী নিজের অজান্তে মুখ খুলল,
-একি! মানুষ না?
হ্যাঁ এতো মানুষেরই গলার আওয়াজ।
আরো ভালো করে উঁকি মারতেই মহী থমকে গেলো।
কি আশ্চর্য এতো কুলসুম! রাকিবুলের মেয়ে কুলসুম কি করে এখানে এলো? আর ওর এই অবস্থাই বা কি করে হলো? কে করেছে এই সর্বনাশ?কে?
প্রথম অবস্থায় মহী ভাবলো গগন বিদারী এক চিৎকার দেবে। কিন্তু কেন জানি তার নিজের কণ্ঠ তার নিজের সাথেই বেইমানী করলো।সে দুই একবার গলায় হাত বুলালো।না কোন কাজ হলো না ।কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না সেখান থেকে। এতে করে তার আতঙ্ক বেড়ে গেলো।
কি না কি ভেবে সে উদভ্রান্তের মতো দৌড় লাগালো গায়ের দিকে। মুখ দিয়ে গোঙরানি মতো আওয়াজ করে আর হাত নেড়ে, পথ চলতি লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাগলো।
গ্রামের রাস্তায় এতো সকালে সেভাবে লোকজন নেই তবু গুটি কয়েক লোকের সাথে তার দেখা হয়ে গেলো। মুখ তখনো ফোটেনি তার চোখ দুটিতে রাজ্যের বিষ্ময়।হাতের আর গোঙরানির আওয়াজে অনেকেই বিরক্ত হলো,ধমকে উঠলোএকজন
-কি কও মিয়া ? ঠিক কইরা কও এমন করতাছো কেন?কি? ওদিকে কি দেখাও?
জামাল নামের একজন মহীর ছোটবেলার বন্ধু সে মহীকে নিয়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে নিয়ে বসালো।সে কিছু না বুঝেও একটু মাথায় পানি দিলো।মুখ ধুইয়ে দিলো।
এখন প্রচন্ড কাজের সময়। ধানের মৌসুম তবু উৎসাহী জনতার আগ্রহ কমে না।পথ চলতি আরো বেশ কিছু লোক জমে যায় সহজেই।
ধাতস্থ হতেই মহী অস্ফুস্ট স্বরে বলল,
-লাশ
-লাশ? সমস্মরে ধ্বণিত হলো । উপস্থিত সকলেই এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।
কি কও?
জামাল বলল,
কোথায় লাশ?
-উত্তর পাড়ার জঙ্গলে।
এ ধরনের ঘটনা এ গ্রামে কেন এ তল্রাটে কেই কোনদিন শোনেওনি দেখেও নি। খুব তাড়াতাড়ি ছোটখাটো একটা দল চলল উত্তর পাড়ার জঙ্গলের দিকে।যদিও মহীকে তারা খুব একটা বিশ্বাস করছে না।মহীকে তারা আধ পাগলা বলেই জানে।
আজিজ মাষ্টার তার কোচিং সেন্টারে এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলো।সে হঠাৎ থেমে দাড়ায়।এতোগুলো লোকের চলাচলে সেও খানিক উৎসাহী হয়। কি হয়েছে জানতে সেও এদের পিছু নেয়।
আলো অনেকটা ফুটে গেছে,মাঠের কাজে বের হওয়া লোকেরা অতি উৎসাহী হয়ে দলটিকে আরো ভারি করে ফেলল তাড়াতাড়িই ।
কিন্তু ঘটনার জায়গার কাছাকাছি আসতেই সবাই কেন জানি আর এগুতে চাইলো না।
জামাল স্ব উদ্যোগে এগিয়ে গিয়ে আর্ত কন্ঠে চিৎকার করে উঠলো,
- হায় আল্লাহ এতো কুলসুম। রাকিবুলের মাইয়া । এরে কেডায় এই অবস্থা করছে।
কুলসুমের নাম শুনে আজিজ মাষ্টার এগিয়ে গিয়ে দৃশ্যটি দেখে এবং হঠাৎ করেই জ্ঞান হারায়।
চলবে।

মে ২০২০ সংকলন

ক্ষুধা
*******
এক মুঠো ভাত দেবেগো মা ?পেটে বড্ড ক্ষুধা ।
পয়সা হলেও অসুবিধা নেই, দাও না গো দাদা।
দুদিন ধরে খেয়েছি কেবল, পানি আর একমুঠো মুড়ি।
অনেক তো আছে কমবেনা দিলে,বাসি ভাত তরকারী।
রোদে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, নেই তাতে কোন দুখ।
ক্ষুধা জ্বালা বড় জ্বালা, অসহ্য মারাত্মক অসুখ।
দালান চাই না ,চাইনা গো ভাই, তোমাদের দামি পোষাক।
দু”মুঠো দাও, তাতেই খুশি, সুখ তোমাদেরই থাক।
#সামনে ইদ আমরা কি ভাবছি এসব ছিন্নমুল মানুষের কথা।
****************************************************************
সার্থকতা
************
জীবনের এতোটা পথ হেটে এসে
পেছন ফিরে দেখি আমি একা।
চলার পথে যারা ছিল অতি আপনজন
তারা সকলে প্রয়োজন মিটতেই,
হারিয়েছে দূরে কোথাও ।
কষ্ট পাইনা,কষ্ট পেতে পেতে
কষ্ট কি সেই অনুভূতিটুকুও নষ্ট হয়ে গেছে।
তারপরেও সহায় কেউ থাকলে
মনের জোর টুকু বাড়তো।
বেলা শেষে ভালোবাসার অবলম্বন টুকু যে বড্ড প্রয়োজন!
এখন খুব সহজেই ঠান্ডা গরমে হাঁপানির টান ওঠে।
উঠতে বসতে গাঁটে গাঁটে ব্যথা।
চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো প্রায়।
কানও বিভ্রান্ত কখনো কখনো।
পথ চলতে পা টলে সহজে।
আরো কত কি!
এতো দিনের বিনিময় মূল্য ভালোই পেলাম
জীবনের কাছ থেকে।
একটু আদর আহ্লাদ
একটু সহানুভূতি, একটু ভালোবাসা।
সব মনে হয় রূপকথা, অলীক স্বপ্ন।
তবু বেঁচে আছি।
বাঁচতে ভালোবাসি।
এখানেই হয়তো জীবনের সার্থকতা।
*************************************************************
আমফান
*********
মেঘেরা ভেসে ভেসে
ডানা মেলে পাখা।
ছুটোছুটির ব্যস্ততা
দূরে একা একা।
দানবীয় শক্তিতে
সমুদ্র উত্তাল।
নাগরিক জীবনের
অবস্থা বেহাল।
পত্র পল্লব সব
মাথা দুলে দুলে।
অসহায় সমর্পণ
প্রকৃতির কোলে।
আকষ্মিক জোয়ারে
ভাসে বাড়ি ঘর।
স্বাভাবিক জীবন কি
ফিরবে এরপর?
নীড় হারা পাখিদের
ছোটাছুটি ভয়ে।
কোথা যাবে এরপর
শেষ আশ্রয়ে?
মাঠের ফসল যত
নিমেষেই শেষ।
গৃহস্থের চোখে জল
দুঃখ অনিঃশেষ।
অসহায় প্রানীকুল
ভয়ে কেঁপে সারা।
আশ্রয়ের খোঁজে
ক্ষিপ্ত দিশেহারা।
হুড়মুড় বৃষ্টির
মহাতান্ডবে।
সকলের সুখ সাধ
এবার ফুরাবে।
কোন কোন দূর্যোগ
কারো কারো তরে।
সৌভাগ্য বয়ে আনে
ধরনীর উপরে।
দশেরে দিয়ে লাথি
কেউ ধনী হয়।
নিঃস্ব আরও ক্রমশ
হয় অসহায়।
আমফান তুমি
ছাড়ো রুদ্র মুর্তি।
অসহায়ের পক্ষ হতে
রইলো এ আর্তি।
************************************************


********************************************************

তুই

তুই আমার কবিতা হবি
স্বপ্ন দেখার মতো?
ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নেবো
যত খুশি তত।
মাঝে মাঝে পড়বো তোকে
পাতা খুলে খুলে।
নানা স্মৃতি নানা কথায়
হৃদয় উঠবে দুলে।
হবি কি তুই বাঁশের বাঁশি
বুকের টানা দম?
তোকে আমি সুরে সাজাবো
নানান রকম।
হবি নাকি গল্প কোন
ভীষণ রকম প্রেমে ।
আলতো ছোঁয়ায় গাঁথবো
চমৎকার ফ্রেমে।

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক  

******************************************

বৃষ্টি তোমায় ভালোবাসি নিজের মতো করে
******************************************
এলোমেলো অনুভূতি
পূর্ণ কলেবর জুড়ে ,
ফিরলে আবার তুমি
নিজের মতো করে।
ছুঁয়ে গেলে প্রতি ফোঁটায়
উল্লসিত মন,
বহুদিনের পর যেন
ফিরলো আপনজন।
এমন করে দিক ভুলে
এলে তো বেশ হয়,
উষ্ণদিনে তোমার অযোগ
কাটেনা সময়।
বৃষ্টি তোমায় ভালোবাসি
নিজের মতো করে,
খোলা ছাদে দাড়িয়ে থাকি
তোমার বিরহে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
**********************************************

মেঘ ভাসি দিন
স্বপ্ন রঙিন।
স্মৃতির কাব্য লেখে
মনের গহীন।
কোথা তুমি মন
ব্যস্ত জীবন।
হেরে গেছি ভেবোনা
লড়ছি এখন।
ছিলো যত ভুল
ঝরা বকুল
সব শেষে ফোটে ফের
নতুন মুকুল।
আধারের গান
হোক অবসান।
নব রবি ঊষালগ্নে
হাসে অম্লান।
************************************************************
রম্য কবিতা ১
**************
কত রাত জেগে জেগে
লিখেছিনু পদ্য
বউ বলে কিযে করো
এতো সব গদ্য।
আমি বলি বুঝবে না
অরবাচীন মূর্খ।
শুধু শুধু এই রাতে
করো কেন তর্ক।
বুঝবোনা বলো কেন
জানি না করো কি?
ফেসবুকে রাতদিন
মেয়েদের দেখা দেখি।
শুনে আমি বলবোকি
হই বাকরুদ্ধ।
চুপচাপ শুয়ে পড়ি
চাই নাকো যুদ্ধ।
**********************************************************
(১)
শুনশান নীরবতা
চারদিক চুপচাপ।
একমনে সুর তোলে
বৃষ্টির টুপটাপ।
(২)
আয়রে তোরা দেখবি যদি
আয়রে সকল আয় ছুটে।
হেলেদুলে নেচেকুদে
যাচ্ছে কেমন ঝাঁকামুটে।
(৩)
ছোট্ট খোকন ভর দুপুরে
এদিক ওদিক পান ধায়।
অবশেষে সত্যি কি সে
রাজকন্যার দেখা পায়?
(৪)
পটল লতা পটল লতা
ফুলটি তোমার সাদা রং।
কেন তুমি রঙিন নও
কেন তুমি দেখাও না ঢং।
*********************************************************
কানামাছি খেলা
***************
এমন হাসি হাসো কেন?
আমি হয়ে যাই মুগ্ধ।
এমন ব্যথা দাও কেন?
আমি পুড়ে হই দগ্ধ।
তোমার চুলের মিষ্টি গন্ধ
দোলনচাঁপা ফুল যেন।
তোমার আমার সম্পর্কটা
এমন লুকানো কেন?
কবে তুমি ছাড়বে বলো
এমন লুকোচুরি খেলা।
ভাল্লাগেনা সত্যি বলছি
অসহ্য এ ঝামেলা।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
********************************************

গীতি কবিতা- ৪

বলবো কি করে দ্বিধা ছিলো, আমি বলিনি। তুলবো তুলবো করে, ছবিও তুলিনি। ক্যানভাসে আঁকবো বলে, মনে আঁকিনি। বুকের ভিতর আছো ভেবে, স্মৃতিতে রাখিনি। কে তুমি নন্দিনী, ভাবনায় আসো যাও। বিরহ জ্বালায় জ্বালিয়ে, আমাকে পোড়াও। প্রিয়তম হতে চাই, ভালোবাসা দাও। স্বপ্নে জাগরণে, কাছে টেনে নাও। রাখিনি তোমায় আমি, স্মৃতিতে রাখিনি। তুলবো তুলবো করে, ছবিও তুলিনি। এলোকেশী বলোনা, নাম বলো না। পরিচিত হতে চাই নয়তো ছলনা । কাছে আসো ভালোবাসো, দাও ধরা দাও। নিবিড় করে আমায় তুমি কাছে টেনে নাও। মনের মধ্যে রাখবো তোমায়,সৃতিতে আঁকবো। বলবো তোমায় মনের কথা পাশে থাকবো। বলবো কি করে দ্বিধা ছিলো, আমি বলিনি। তুলবো তুলবো করে, ছবিও তুলিনি। ক্যানভাসে আঁকবো বলে, মনে আঁকিনি। বুকের ভিতর আছো ভেবে, স্মৃতিতে রাখিনি। [sb]© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক[/sb]

শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

মধুরিমা সমগ্র

[১]
মধুরিমাঃআমায় তুমি নিয়ে চলো বানভাসি জলের মতো।
************************************************************
মধুরিমা,
বসন্ত তোমায় সাজিয়েছে নিজ হাতে।
তোমার সারা শরীরে,
গেঁথে রেখেছো তুমি, গানের অলংকার।
অস্থির অবগাহণে তুমি ছড়ালে,
ভোরের দীপ্তি নব রবি কিরণে।
প্রণাম তোমায়, হে ভালোবাসার দেবী।
তোমার ছায়ায় আমি খুঁজে পেয়েছি,
বেঁচে থাকার আসল মানে।
কঠিন সময় জয় করেছি যত, তোমারই অনুপ্রেরণায়।
তোমার তনু স্রোতস্বিনী সম,
বয়ে চলে আমার হৃদয় গভীরে।
তুমি আরো সিক্ত করো আমায়,
নিঃস্ব করো আমায়,হে ভালোবাসার দেবী।
তোমার শরীরের বর্ণ বাহারে, আমি হারাই বারবার।
আমায় তুমি নিয়ে চলো বানভাসি জলের মতো।

রচনা কালঃ১৮ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৯:১৯  
[২]

মধুরিমা , তুমি কেমন আছো ?

****************************************************
নিদ্রালু চোখে হাজার স্বপ্ন ভিড় করে আজকাল । তোমার আমার স্বপ্ন ,জুটিবাধার স্বপ্ন , জুটি ভাঙার স্বপ্ন ........। সেই সে প্রথম আবেগের বেলায় .। আমি খাতার পৃষ্ঠা ভরে তোমার প্রেমময় মুখ এঁকেছি কত শত শত। কারণে অকারণে..........। তোমার সাথে আমার নাম লিখেছি অপূর্ব + মধুরিমা ! এঁকেছি কেটেছি এঁকেছি কেটেছি নিজের মনের মতো আমি বোকার মত কৈশরে তোমার দেওয়া কষ্ট মেনে নিয়েছি। কষ্টেরা অতীত!এখন তা দুঃখবিলাসে রূপ নিয়েছে। তখন কত অস্থির ছিলাম ভাবতেই হাসি পায় । আমি তখন সারাটা দিন চেয়ে থাকতুম তোমার পথের পানে ....... যে পথ দিয়ে তুমি স্যারের কাছে পড়তে যেতে..বা খেলতে। তোমার বাবা সে কি ভয়ঙ্কর রূপ ........? আমার মনের একটা গোপন কুঠোরিতে তোমার দেওয়া পুরোনো উপহার গুলো এখনো আছে। সেদিন গুলোতে কত স্বপ্ন ভালোবাসায় আকড়ে ছিলো এবং আছে। তোমাতেই অভ্যস্ত ছিলাম পাগলের মতো! খুব জানতে ইচ্ছা করে ,মধুরিমা তুমি কেমন আছো ? আমি জানি তুমি দুর প্রবাসে একলা আছো। আমি জেনেছি । স্বাচ্ছন্দ্যের লোভে গড়া সংসার তুমি ভেঙে ফেলেছো। আমিও একলা আছি....। ভেবো না তোমার বিরহে আমি সন্ন্যাস জীবনযাপন করেছি । আমিও ভালোবাসার স্বাদ গন্ধ সব নিয়েছি....। তারপর সেই স্বপ্নও একদিন ফাটা বেলুনের মতো ভেঙে গেছে । তোমার আমার জীবনের , অতীতে আমার কষ্টে ভেজা মুখ ! তোমাতে অভ্যস্ততা........। তোমার স্মৃতি পরিনত হয়েছে আজ আমার দীর্ঘশ্বাসে..... তোমার পছন্দের আলো ঝলমল সুখের খোঁজে হারিয়ে যাওয়া। সেই মুখের নষ্ট মায়া! সম্পূর্ণ একটা মানুষকে নষ্ট করে .......। আমার বুকের মধ্যে সুতীব্র ক্ষত হয়ে রয়ে গেলে । আর আমি তোমার বিরহে এখনো একলা একা স্মৃতি গুলো রোমন্থন করি। অন্য রকম সুখ পাওয়ার আশায় ......... মধুরিমা ,তুমি কেমন আছো ?

রচনাকালঃ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩১   
*********************************************************** 

[৩]

এই আমি ও মধুরিমা

************************************
মধ্যরাতের ছায়ামানব এই আমি ।
একাকী অলস সময়গুলো কাটে না আর এখন কিছুতেই।
বিরক্তিকর প্রহরগুলো যাতনা বাড়ায় কেবল ই....। 
ভাবি বসে আমার নিঃসঙ্গ অধ্যায় নিয়ে।  
আকাশ তোমার কাছে একটা প্রশ্ন ছিলো....... ,
তুমি তো সাক্ষী ছিলে,
ইচ্ছেঘুড়ি চেপে এলোমেলো দুরে কোথাও যেতে....... 
চেয়েছিলাম তো এই আমি ও মধুরিমা।  

কালো-কালো পাখিগুলি বাকা ঝাঁক বেধে উড়ে চলে যেথায় ।
তোমার বুকের কাছাকাছি। 
তোমার স্নেহের ছায়ায় ....।
দেখতাম বসে বসে প্রায় আমরা। 
আকাশ তোমার বুকটা কতই না নীল,
অজানা রঙের পাখীগুলো ক্রমশ  আরো ছোট হতে হতে বিন্দু হয়ে যায়,
যেন তোমার বুকে কালো কালো তিলক হয়ে ফুটে আছে। 

অথবা নক্ষত্রেভরা রাতে নিস্তব্ধ চরাচরে....,
দুরে বনমাথায় ঝিকিমিকি জোনাকির আলোয়। 
যেমনি করে আমরা মিশে যেতে চাইতাম ........  

আমাকে তুমি আবার অনুপ্রেরণা দাও । 
নিঃসঙ্গতা দুর করে আবার তোমার শুক্লাতিথির পূর্ণিমার চাঁদের-
আলোয় পথ দেখাও.......।  

যাতে আমি আবার পৌছে যেতে পারি তোমার বুকে।
শুধু আমি নই সাথে মধুরিমা আসবে হয়তো ....
দেখা হবে  তোমার বুকের মধ্যিখানে যেখানটায় আকাশ অনেকটা নীল ।
দিনগুলি হবে হাজার রঙে রাঙানো অবাস্তব স্বপ্নীল। 
রাতগুলো হবে বর্ণাঢ্য ,নক্ষত্রের আলোয় উজ্জ্বালিত  ।
আমি ফিরতে চাই.....।
আমি আর মধুরিমা দুজনে একসাথে ই ফিরতে চাই ......... 
রচনাকালঃ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৫৪

*************************************

[৪]

মধুরিমাঃ তোমাকেই খুঁজছি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৫
মধুরিমা, 
নীল আকাশে মাঝে আমি তোমায় খুঁজি ,
খোলা দিগন্তের শেষে আমি চোখ মেলি......
যে পথে তুমি চলে গেছো একদিন 
বিষন্ন মন নিয়ে আমার ই ভুলে !! 
একই পৃথিবী একই আকাশ 
খোলা প্রান্তর পথ  নদী ঘাট
তবু তোমার কাছে পৌঁছাবার কোন উপায় জানা নাই ।
ঠিকানা না রেখে এক বুক হতাশায়
শুধু দীর্ঘশ্বাস হয়ে কোথায় হারিয়ে গেলে......প্রিয়তমা। 

অবনত অপরাধবোধের দীর্ঘশ্বাস সর্বত্র 
চকিতে হাঁটাপথে তোমাকেই খুঁজে ফেরা ,
এখনো এলে না এলে না ....
তবে কি আর কখনো  দেখা হবে না?   
************************************************
[৫]

মধুরিমা ও আমিঃ যখন বসন্ত ছিলো

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৩  
 কতবার বলেছি !!
তোমার জলরঙের শাড়ি পরা দেখলে আমার রাগ হয়।
দেখো তো!
সবাই কিভাবে হ্যাংলার মতো ড্যাবডেবিয়ে দেখছে!
চোখগুলো এমনভাবে নাচাচ্ছে ! 
অদ্ভুত!!
কোনকালে আর কোন মেয়েকে দেখেনি মনে হয় !!
এমনভাব করছে,
পারলে তো দেখি এখনই ছুটে আসে।
অসভ্য একেকটা।
মনে হচ্ছে গিয়ে একেকটাকে থাপ্পড় মেরে দেই।
মধুরিমা হাতটা ছাড়ো তো........    
********************************************************
[৬]

মধুরিমাঃ তার তথাকথিত প্রেমিক ও আমি  

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৪
নিত্যদিনের মতো আজো মধুরিমা এসে দাড়ালো,
ঝুল বারান্দায়।
চুল শুকানোর বাহানায় হয়তো।

সদ্য জলে ভেজা আদ্র্র মুখ,
অলৌকিক মোহময়ী চঞ্চলতা ছুঁয়ে,
তার রূপকে করেছে স্বর্গীয় আভাদীপ্ত।
কারো কারো রূপে তীব্র  টগবগে প্রানবন্ত ভাব থাকে,
অহংকার থাকে 
আবার
আদ্যাশক্তি ছুঁয়ে যায় অভিন্নতা।
ঠিক তেমনি বর্ণাঢ্য মধুরিমা!

আমি আড়ালে জানালার গ্রিল ঠোঁটে ধরে ,
চোখে দেখে নয়ন সার্থক করি।
এবং
তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো চেয়ে ই থাকি মানসী পানে।

মধুরিমার এসবে ভাবনা নেই যেন,
তার প্রেম পরিণয় সব বুঝি মনের গভীরে লুকানো।
সদা অবিনীত,গৌরবান্বিত ,অবিমিশ্র।
সে জানে শত শত অপ্রতিভ যুবক তাকে দেখে প্রতিনিয়ত,
যেমন এই দুপুরে ও তেমনি।
শীতে রোদ পোহানোর মত প্রেম পোহাচ্ছে তারা। 

নিচের পৃথিবীকে সে বরাবরই অহংকারী চোখে চায়। 
মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখে,
যুবকগুলোর দিকে হয়তো করুণা ছুঁড়ে দেয় দৃষ্টির চাহনি রেখে,
এবং তৎক্ষণাৎ আবার গ্রীবা উচু করে সে অহংকারী পাথরের মূর্তির মতো ভাবলেশহীন 
আকাশের দিকে চেয়ে রয় । 

আর এদিকে পাণিপ্রার্থী যুবকেরা সিগারেটের বর্ণিল ধোয়ায় নিঃশ্বাস ছেড়ে, 
নিকোটিন পুড়িয়ে,
সেই ধোয়া গোল গোল করে পাকিয়ে উড়িয়ে দেয় আকাশে,
চলে অবিরত আর অনবরত,
শুধু রাতের অপেক্ষায় প্রহর গোনে,
যখন সে স্বপ্নে ধরা দেবে অবলীলায়। 
রূপকথার রাজকন্যা হয়ে!! 
আর
আমি শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি ......।     
************************************************
[৭]

মধুরিমাঃ ধরেই নিলাম, এ আমারই ব্যর্থতা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৪

মধুরিমা,
তোমার খোলা আকাশে 
আজকাল পারিজাত ফুলগুলো 
বড্ড বেশি রঙীন দেখায়।  

তোমার বাহান্ন তীর্থের শরীর
আমায় অনর্থক রাত জাগায়।

তোমার ওই নিটোল কোমর,
বাঁকা ঠোঁট,চঞ্চল পটলচেরা চোখ,
দীর্ঘ কেশ
একহারা গড়ন,চলার ভঙ্গি,
আমার হৃদয়ে কেবলি  নিগম তুলে ধায়। 

আচ্ছা তুমি এরকম পাকাল মাছের মতো
পিচ্ছিল কেন বলতে পারো?

তুমি কি জানো?
তোমার জন্য আমার এই পৃথিবীতে আসা। 
তোমার জন্য আমার  সমস্ত কবিতার পঙক্তিগুলো এলোমেলো এবং প্রথাবিমুখ ।  
তোমার জন্য আমার স্বপ্নদিনের অশ্রুত হাততালি দেয়,  
তোমার জন্য আমার যত নিকোটিন পোড়ানো। 
জানিনা , জানো কিনা ?

একবার হলেও আহ্লাদি করে বলতে তো পারো !
হোক মিথ্যে করে!
বলতে তো পারো!  
ছাড়ো তো এসব  ভাবনা চিন্তা আর
বিড়ি সিগারেট , আমার হাতটা ধরো।

জানি তুমি উত্তর দেবে না ,
বলবেনা কোন কথা। 
হয়তো নৈবেদ্য সমূহ সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি 
তোমার মন মন্দিরে।
হয়তো ফুটিয়ে তুলতে পারিনি আমি আমার
মনের ব্যক্তিগত বার্তা সকল, 
তোমার মনের মতো করে সাবলীল হরফে । 
ঠিক আছে ধরেই নিলাম,  এ আমারই ব্যর্থতা   
******************************************************
[৮]

মধুরিমাঃ এলে তুমি অবেলায়

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:১২   
অন্ধকারে হঠাৎ করে
চমকে উঠলাম  
অকস্মাৎ! 
একি তুমি!  
চিলেকোঠার ঘরে নিকোটিনের গন্ধে 
তখন সেই রকম অবস্থা। 
কিছুটা চেনা গন্ধে সন্দেহ ভরা চোখ
খুঁজতে থাকে চেনা কিছু ।
এশার আযান চলছে কাছের মসজিদে তখন।

অন্ধকার, তবু বিড়ির আগুনের আবছা আলোয়, 
তোমার অঙ্গভঙ্গির সঞ্চালনে , ভঙ্গিতে 
স্থির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলো মস্তিষ্ক। 

তুমি! 
এযে তুমি!
এতো চির নবীন কমলিনী মধুরিমা।  

হঠাৎ উদাস হলো মনটা,
বুকের মধ্যে গরম হাওয়া ঘুরে গেল একরাশ।
কেঁপে উঠলো দেহ,তনু, মন।
হিম বয়ে গেল শিরঃদাড়া বেয়ে!

তারপর নিমেষেই তীব্র ক্রোধে জ্বলে উঠলো অন্তকরণ! 

সেই সময় কে যেন নিষ্প্রভ কণ্ঠে বলে উঠলো ,তুমি মনে হয়?
বিড়িটা এখন কি খুব বেশি টানো?
শরীরে প্রভাব পড়বে যে!  

আমার বুকে এখন ও চির বিরাজমান অতল ক্রুশবিদ্ধ কষ্ট।
মধুরিমা ,শুধু তোমার কারণ। 
তুমি ছিলে আমার শিয়াল কাঁটার বনে
মধুচক্রস্থিত স্ত্র্রীমক্ষিকা একসময়।
আমি বুকের থেকে ঘামের মতো মুছে ফেলেছি তোমার নাম বর্তমানে! 

কি যে হলো হঠাৎ, 
আমি রুক্ষ কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে বললাম, 
তুমি ফিরে যাও মধুরিমা।
আমি এখন আর তোমার নই।
তুমিও এখন আর আমার নও। 
তোমার আমরা পথ এখন দুটি দিকে। 
তুমি এখানে কি চাও?
আমি পরস্ত্রীর সাথে কথা বলিনা।

তোমার চোখে কি জল এলো?
হয়তোবা।
অনেক সময় ব্যাথার কাঁটা ফুটিয়ে দিতে হয়,
ব্যাথার স্থানে।
যন্ত্রণা সারাবার জন্য। 

তুমি ফিরে গেলে।
ক্লান্ত দেহ ভঙ্গিমায়।
আমার বুকটা আবারো কেঁপে উঠলো  অপরিজ্ঞাত মর্মযন্ত্রণায়।
বুক চিনচিন সাথে মনস্তাপ ,পীড়ন।
এতো ক্লেশ অতর্কিতে কোথা হতে এলো কে জানে!  

অভিসন্তাপ তো দুর হলো না যে কিছুতেই!!   

++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
[৯]

মধুরিমাঃ ছেড়ে দাও নিষিদ্ধ যুবকের হাত   

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৪    
মধুরিমা,
কেন ধরেছো হাত তুমি অচেনা যুবকের?
কেন এত ঢলাঢলি?
দেখছে সবই ওই দখিনা ধ্রুবতারা.নীল জোছনা,
স্বপ্ন ভাঙা চোখে।
কেন তুমি বুঝেও বুঝো না, কেন?
ফিরে এসো প্রিয়া,
এসে ধরো এই প্রেমিকের হাত।
ঠোঁটে রাখো ঠোঁট,
আলগোছে নিভিয়ে দাও বেহায়া যত আলো।
একান্ত আকর্ষণে।
চলে এসো মধুরিমা।
এই বসন্তে,প্রেমময় নীপবনে।
জেনে রেখো,
অনেক ব্যাথা বুকে সয়ে,হারায়নি ধৈর্য।
ফিরে এসো সুনামির ঢেউ হয়ে,
তৃষিত বুকের তপ্ত বালুচরে।
আছড়ে পড়ো উদ্দামতায়।
আমি সব চাপ সয়ে, সব ক্লেশ মেনে,
টেনে নেব তোমার নির্যাস।
এসো ধরো হাত,এসো নিবিড় সন্তোলনে।
আমি বলছি, তুমি ছাড়ো হাত ওই নিষিদ্ধ যুবকের।
ফিরে এসো প্রিয়তমা।   
**************************************************************
[১০]

মধুরিমাঃ আজ তোমার বিসর্জনের দিন

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:২২
মধুরিমা,
শুধু তোমায় দেখবো বলে,
মন খারাপ। তবু,
এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে,
এলাম ব্যলকনিতে।
আজ যে তোমার বিসর্জনের দিন!
আজ আমার স্বপ্ন ভাঙার দিন!

এতো সেজেছো,
তবু মনের কষ্ট লুকাতে পেরেছো কি প্রিয়তমা?

কপালে পরেছো টিপ,
চোখে কাজল, ঠোঁটে মেখেছো আগুন রাঙা রঙ।
পুরো মুখ তোমার আবির রং এ রাঙা,
এত সাজ এত অলংকার…..।
অপরূপা লাগছে তোমায় বিয়ের কণের সাজে,
তবু
এত যতনেও,
তোমার কষ্টের ছাপগুলো,
একটুও লুকাতে পারোনি প্রিয়তমা।

আমার চোখ তুমি ফাঁকি দেবে?
কিভাবে?
এতটাই সহজ!

তোমার বিষন্ন আকাশ দেখে,
আমার চোখে যেন এলো বরষা।
মনের অলিন্দ বেয়ে বয়ে গেল কষ্টের নীল স্রোত!

সানাইয়ের মৃদু সুর,ভীড়, কোলাহল।
অতিথি আপ্যায়ন,

কতো আড়াল কত আবডাল!
কিন্তু এতো আড়ালের পরেও মন আড়াল হবে কি করে?
প্রিয়তমা।

তোমার চোখ যে মনের আয়না।
আমি সেই আয়নাতে দেখি,
তোমার কষ্টের উপাখ্যান।

আর তীব্র দহনে কেঁপে উঠি বারেবার।
হঠাৎ চোখে বান এলে শেষ দেখা দেখবো কি করে?
কেন এতো জল আসে চোখে?
বলো না প্রিয়তমা?
মহা যন্ত্রণা হলো দেখছি।   

এখন তো আমায় ভালোবেসে চোখ মুছিয়ে দেবার মতো,
কেউ রইলোনা আর।
তবু তুমি ভালো থেকো প্রিয়তমা। 
ভালো থেকো মধুরিমা।    
*****************************************************************
[১১]

মধুরিমাঃ কিছু সুখ স্মৃতি

১০ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫৫   
শহুরে চাঁদের আলো অতটা কাব্যিক নয়।
যতটা কাব্যিক খোলা প্রান্তরের  জোছনা। 
কতদিন হয়ে গেলো,সনাতন জোছনা মাখা হয়নি।
তোমায় আমায় মিলে!
তাই নাগো প্রিয়তমা? 

তোমার কি মনে পড়ে মধুরিমা?
তুমি আমি ঝিলের ধারে,
রাত গভীরে। 
শূন্য শুনশান স্তব্দ চারপাশ।
নারকেল পাতার ফাঁকে পূর্ণ চাঁদ।
দম বন্ধকরা ভালো লাগা মুহুর্তে সে সময় যেন!
উদাসী কোন রাখাল রাত নিশিথে বাজায় বেদাগ সুর, 
সেই মধুক্ষণে,
তুমি রেখেছো হাত আমার এই হাতে।
অপরিমিত ভরসায়। 

রাত্রি জাগা স্খলিত নিদ্রা সঙ্গী সেই প্রহরে।
শুধু তুমি আমি ,পৃথিবীতে যেন একমাত্র মানব মানবী,
ঝিরিঝিরি দখিনা হাওয়ার আন্দোলনের মাঝে।
বাষ্পীভুত দুঃখবিলাসের মৃদু মন্দ করুণ সুর বাজছে 
অমত্ত চরাচরে।
কথা চলে মুখে নয়,
হৃদয় থেকে হৃদয়ে অব্যক্ত ভাষার  ইঙ্গিতে,
আর সুখের দোলায়,
আমরা চলেছি ভেসে অজানাতে।
শুধু ছায়াগুলো আছে সঙ্গী হয়ে পাশে পাশে। 
*******************************************************************
[১২]

মধুরিমাঃ আইসোলেশনের দিনগুলোতে তোমায় মনে পড়ে

৩০ শে মার্চ, ২০২০ ভোর ৬:২০   

জীবনের চলতি পথে,
অনেকগুলো কান্না একসাথে
জড়ো হয়ে বেদনা ও অভিমানের সৃষ্টি হলো।

তিমির রাত্রি ঘন ঘোর আঁধার,
শ্বাসরোধ হয়ে আসা সময়।

তবুও কি তুমি ফিরবে না মধুরিমা?
আসবেনা খোঁজ নিতে একবার,
দেখবে না চোখের দেখা?

মেয়েদের এতো বেশি নির্দয় হতে নেই প্রিয়তমা।

জানি পৃথিবী ভর্তি অক্সিজেন।
শুধু আমার জন্য বিধাতার বরাদ্দকৃত
অক্সিজেনটুকু ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে,
যদি একবার মুখখানি দেখতে পেতাম তোমার!

আইসোলেশনের বড্ড যন্ত্রণাময় দিনগুলোতে
তোমাকেই খুঁজে ফেরে মন বারে বার।
চলে যাবার আগে হয়তো দেখা হবে না আর,
হবে না কোন কথা,
শুধু জানিয়ে গেলাম আমার এ অসহায় হাহাকার।      
**********************************************
[১৩]

মধুরিমাঃ ভালো থেকো   

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:০১   
কেমন আছো প্রিয়তমা স্বেচ্ছা বন্দী জীবনে? 
ঠিকঠাক আছো তো নিয়মে?  

আমি কিন্তু ভালো আছি, নতুন জীবনাচরণে,
এখন তো ঘরে বসেই থাকি।
যদিও মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি।
তোমাকে না বদলালেও অন্য অনেক অভ্যাস
আমি বদলে নিয়েছি, সময়ের প্রয়োজনে। 
তবে কখনো কখনো সিগারেটের নেশাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে,
তুমি যাকে  সতীন বলতে ভালোবাসতে ! 
তুমি ছেড়ে গেলেও তোমার সতীন আমাকে ছেড়ে যায়নি কখনো। 

আর কি করি?
গান শুনি। মুভি দেখি।
ছবি আঁকি মাঝে মাঝে।
আচ্ছা তোমার ওই গালের তিলটা ঠিকঠাক আছে তো। 

একটা কথা তো বলাই হলো না, 
তুমি না আমায় কবি রুপে দেখতে ভালো বাসতে!
আমি তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে,
তোমার আমার সম্পর্ক নিয়ে লিখতে লিখতে ,
কবিতার মতো কিছু একটা লিখে ফেলছি।
ফুরসত পেলে অবশ্যই শোনাবো তোমাকে।
হতে পারে সেটা করোনা মুক্ত পৃথিবীর বিজয় উৎসবে।
ততোদিন খুব করে ভালো থাকা চাই কিন্তু।     

মাঝে মাঝে মন খারাপ হলেও ,
এখন আমার সময় কাটে  বিশ্রাম নিয়ে,
বিশ্রামেও ক্লান্তি আসে আজকাল! 

এই প্রথম বুঝলাম না পাওয়ার আনন্দেই মজা বেশি।
যেমন তোমাকে হারিয়ে আমি...... 

ও হ্যাঁ তোমাকে তো বলাই হয়নি,আমি দারুণ  রান্না শিখেছি।
ঠিক তোমার মতো করে।
মাটন কষা, ছোট মাছ চচ্চড়ি,
সেই সাথে প্লেইন পোলাও।
জানি শুনলে তোমার জিভে জল এসে যাবে। 
দেখা হবে যখন, খাওয়াবো, কথা দিলাম।
মুক্ত পৃথিবীতে আবার আমরা প্রেম করে বেড়াবো। 
সব ভুলগুলো শুধরে নেবো। 
তখন কিন্তু না বলতে পারবে না। 
ভালো থেকো মধুরিমা।    
***************************************************
[১৪]

মধুরিমাঃ এই আমি  

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫২

জানি প্রতি ক্ষণে তোমার গভীর ভালোবাসায় ছিলাম,
এই আমি।
জানি তোমার প্রতি  নিশ্বাসের সাথে ছিলাম,
এই আমি।
জানি তোমার প্রতি  রাত জাগা রাতের কল্পনায় ছিলাম,
এই আমি।
জানি তোমার প্রতি  প্রিয় গল্পের মধ্যমনি ছিলাম,
এই আমি। 


এতো চাওয়া, এতো আকুলতা,
এতো প্রেম,এতো ভালোবাসা।
তবে তবু কেন তুমি রয়ে গেলে অধরা?
তবে তবু কেন তুমি রয়ে গেলে রহস্যঘেরা?
জানতে চেয়েও পারিনি  জানতে।
কাছে  থেকেছি তবু কেন?
পারিনি কাছে  টানতে।  

তবে কি এ চাওয়ায়  ছিলো  কোন ফাঁকি? 
তোমার ভালোবাসা সব কি তবে মেকি?
বুঝিনি  আমি সত্যি  বুঝিনি। 

একি ভালোবাসা? নাকি ছলনা?
বলনা? 
বলোনা মধুরিমা, প্রিয়তমা একটু বলোনা।  

উফ! আবার সেই নীরবতা।
আবারও  সেই রহস্যময়তা।
তুমি  পারোও বটে!
তবু আমি রবো অপেক্ষায়।    
*************************************** 
[১৫] 

মধুরিমাঃ আমি তোমায় ভুলতে চাই   

১৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯    
তোমায় কি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি মধুরিমা? 

হঠাৎ হাসি এলো,
জানি,
জানি সেতো সম্ভব নয়।

পাওয়া না পাওয়ার খেলাতে
সারাটা জীবন,
আমি বরাবরই না পাওয়ার দলে।
হেরো পার্টি আর কি।

আমার জীবনটাই একটা ধোকাবাজির সুদীর্ঘ উপন্যাস কিনা।

কতকাল হয়ে গেলো!
তোমায় ছুঁয়ে দেখা তো দুরের কথা,
চোখের দেখাও দেখতে পেলাম না।

আমাকে হয়তো ভুলে গিয়েছো!
অথবা জোর করে মন থেকে সরিয়ে রেখেছো।

এতো স্মৃতি, এতো গান ,এতো কথকতা।
কিভাবে সম্ভব ভুলে যাওয়া? 

কি করে পারলে?
আমায় একটু শিখিয়ে দেবে?
বেঁচে যেতাম তাহলে এ জীবনের মতো।

আচ্ছা,
কিভাবে বুকের দহন ভুলে থাকতে হয়?
কি করে সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জন্য  
স্মৃতি কাতর না হওয়া যায়।
কিভাবে সমস্ত অতীত এক নিমেষে
এক ক্লিকে ডিলিট করতে হয়?

ঠিক যেমন করে তুমি আমায় ভুলে গিয়েছো।
যেভাবে আমার স্মৃতি ছুড়ে ফেলেছো।
হ্যাঁ ছুড়ে ফেলেছো।

জানো না হয়তো,
কষ্টের রাতগুলো কতোটা বেদনায় ভরা।
সুতীব্র উল্লাস ধ্বনি সহ নিত্য কুরে কুরে খায় 
আমার হৃদয় মন্দির।
নিয়মিত এখনো নিয়মিত।

আমি একটু শান্তি পেতে চাই।
আমি একটু ঘুম জড়ানো রাত পেতে চাই।  
তুমি এমন কেন? কেন এমন?
কেন তুমি এলে এ জীবনে?
আবার চলে গেলেও হ্যালির ধুমকেতুর মতো।
কেন?

কোথায় হারালে ? কোথায়?
খুঁজে খুঁজে আমি হয়রাণ।

আমি আর খুঁজতে চাই না তোমায়।
আমি আর  ছুঁতেও চাই না তোমায়।
আমি আর চোখের দেখা দেখতেও চাই না তোমায় ।
 
আমি তোমায় ভুলতে চাই,
ভুলতে চাই।
ভুলতে চাই।   
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক