মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

কয়েকটি কবিতা



একজন পতিতার গল্প
+++++++++++++++++


জীবন এখানে নয়তো সহজ , অজস্র কাঁটা বিছানো।
পদে পদে লাঞ্ছনা,কষ্ট আর অপমানে জড়ানো ।।

অল্প বয়সের ধোঁকায় পড়ে এলাম ঘরের বাইরে
বাইরে এসে চেয়ে দেখি আমার যে কেউ নাইরে ।। 

সংসারে ছিলো দারুন অভাব নুন আনতে ফুরায় পান্তা
মা ছিলো চির রোগা অসহায় ,বাপ ছিলো সবজান্তা । 

 ভাইবোনগুলো পেটে  শুধু ক্ষুধা আর ছিলো দারিদ্রের জ্বালা
বেশির ভাগ  দিন ই  না খেয়েই তাদের কাটতো কষ্টের বেলা ।। 

ক্ষুধার জ্বালায় বাহির পানে একদিন , দিলাম হাত বাড়িয়ে
বড়লোকে বখাটে ছেলেটি সাগ্রহে নিলো প্রেমে জড়িয়ে ।। 

রুপ যে আমার অনেক দামি তখন  থেকে বুঝলাম ,
ধোকায় পড়ে বোকা বনে আবার একদিন সব হারালাম  ।।

যথারীতি নেশা কাটতেই ছেলেটি দিলো হাত ছেড়ে ,
তখন থেকে একলা আমি ,আত্মীয়রা গেল সব সরে দূরে ।। 

আশা দিলে বিধাতা তুমি যা পূরণ হবার নয় ,
চিরদিন সাধের দুনিয়া আমার কাছে অচেনা ই হয়ে রয় ।

গড়িলা বিধি তুমি আমায় করিয়া অসামান্য অপরূপ
রূপের আগুনে মরলাম পুড়ে আর তুমি দেখলে ঠায় নিশ্চুপ ।।

এমন রূপ তো চাইনি আমি যা আমায় দেবে জ্বালা ,
জীবনজুড়ে বয়ে ই গেলাম অজস্র কাঁটার মালা  ।

আমি নইতো আমার নিজের , হাজার দুয়ারী ঘর 
প্রতিদিনই হয় নতুন মিলন, প্রতিটি মিলন ই দুঃখ ভরা বাসর ।।

কত সুখে আমায় রেখেছো দেখলেনা একবার ফিরে
পাপ কলঙ্কে জীবন কলসি কানায় কানায় গেছে আজ ভরে ।। 

পতিতা আমি , পরিচয়ে মানুষ ,আমারও আছে মন
কে ভাবে আর বেশ্যার কথা। ভেবেছে কেউ কি কখন? 

এখনো আমি রাস্তায় দাড়িয়ে লোক লজ্জার নেই ভয়
মুক্তি কবে আসবে জানিনা ,প্রতীক্ষার প্রহর  কেন এত দীর্ঘ হয় ?
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

নাগরিক জীবন

*************************
চলছে জীবন এই শহরে
নিয়ম অনিয়মের মাঝে ।
চলছে মানুষ , কষ্টে আছে তবু ,
চেষ্টা , উন্নত জীবনের খোঁজে ।।  

মানুষ এখনে বড় স্বার্থপর 
কেউ তো কারো  ই নয় ,
শুধু মাত্র সেই জন্য 
অকারণ কষ্ট পেতে হয় ।। 

ভালোবাসার চেষ্টা এখানে 
দুঃস্বপ্ন মেশানো ক্ষত , 
বিপদে কেউতো দেখেনা কাউকে , 
যে যার নিজের মতো ।।  

মানুষের জীবন এখানে সস্তা 
কঠিন নাগরিক জীবন  । 
বোঝেনা তো কেউ কারো চাওয়া পাওয়া ,
কান্না হাসি বেদন ।  

ভালোলাগা ভালোবাসা 
সব ই সাজানো ,সবই মেকি মনে হয় 
মুখের হাসি সে ও তো বিরাট  এক ফাঁকি  ,
ভালো বাসা সেতো নয় ! 

জীবন চলছে এখানে নিত্য
তথাকথিত জীবনের মত ।
প্রতি পলে বাড়ছে বেদন ,বাড়ছে জ্বালা ,
বাড়ছে কষ্ট শত শত।।  
   
মনের চাইতে ইট পাথর , 
এখানে অনেক বেশি দামি ,
আবেগের কোন মূল্য ই নেই ,
ভুক্ত ভোগী আমি । 

যান্ত্রিক জীবন সবকিছুই যেন 
যন্ত্রের ই মতো চলে ,
নাটকীয়তায় ভরা রুপকথা এখানে ,
প্রতি নিয়ত কথা বলে ।।  

কোটি লোকের ভীড়ে আজব 
এ শহর পরিপূর্ণতায় ভরা ,
তবু কেউ তো কারো চেনা নয় 
সকলেই নিঃসঙ্গ তাহারা ।  
  
পাখ পাখালি বলতে এখানে 
শুধু ই চড়ুই আর কাক ,
ফুল পাখী লতা পাতা 
দেখা মেলে সেতো দৈবদূর্বিপাক।। 
   
আকাশ এখানে অনেক দূর 
এক চিলতে জমি ,
তার ফাঁকে চাঁদ উঠলেও 
দেখতে পাইনা আমি।। 

গলা ফাটানো হর্নের বিকট 
চিৎকার চেচামেচি ,  
সয়ে গেছে সব অসুবিধা নেই ,
এই নিয়ে বেঁচে আছি।  

মশা মাছি আছে সর্বদা 
আছে মহামারি ডেঙ্গু , 
ধরিলে তোমায় ছাড়িবে না 
সংসার হবে পঙ্গু ।। 

কে চলে এখানে কার আগে
সেটাই বোঝা  ভার ,
স্বার্থ সবার নিজের ই 
ভাবনা আপন যার যার ।।  

সদা বেপরোয়া 
মোটর গাড়ি বাইক ও নানান মরণযান ,
অনিয়ম হেথায় নিয়ম যেন 
তীব্র গতিতে ধাবমান ।।

সীসায় ভরা বাতাস এখানে 
সাক্ষাৎ মৃত্যু  আলিঙ্গন  ,
জেনে শুনে সদা সর্বদা করিতেছে মানুষ ,
অমৃত ভেবে বিষ পান ।। 

আটকে গেছি সবাই মোরা 
শহুরে ঘূর্ণির আবর্তে  ,
পা হড়কালে পিছলে যাবো 
পড়বো সোজাসুজি গর্তে।  

তবু সবাই আমরা আছি এই 
শহরে ভাই ,
যাবে কোথায় লেজ যে বাধা  
কোন মুক্তি নাই ।।  

আমার বন্ধু রাজীব খান 
ঢাকার পথে পথে ,
ছবি তোলেন নিত্য নতুন  
স্বপ্ন বিছাতে । । 

সেই স্বপ্নে মোরা স্বপ্ন দেখি 
হবে সুখি বাংলাদেশ ।
ফুলে ফলে পরিপূর্ণ হব মোরা 
রইবে না দুঃখ  ক্লেশ।। 

সেটাই.....।ইচ্ছা হলেই মুক্তি নেই 
সবাই ই তো আছে ভালো।
এই তো যাচ্ছে চলে একরকম     
কেনই বা মন্দ বলো । ।    
***************************

বানভাসি

+++++++++++++++++
বানের জলে ভেসে গেছে বাড়ি
ডুবেছে  ফসল মাঠ
হারিয়ে গেছে  সহায় সম্বল 
হারিয়েছে চেনা ঘাট ।

শত শত লোক নিরাশ্রয় হলো  
চোখের ই নিমেষে ।
হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত শিশু বেঁচে আছে দেখো , 
 প্রচণ্ড কায়ক্লেশে ।

চারিদিকে জল আর্তের কোলাহল 
সামান্যতৃষ্ণার পানি পর্যন্ত নাই ।
ত্রানের আশায় বসিয়া রইলো বৃথাই 
কেউ তো দেখেনা ভাই। 

একটু কি দয়া হয়না তোমার 
এই দুঃখী জনের তরে ।
ছিলতো সবকিছুই হারিয়েছে তাহারা ,
নিদারুণ ভাগ্যের ফেরে। 

এদিকে মানুষের এত দুঃখ জ্বালা ,
হাহাকারে ভরা জীবন ।
অপর দিকে চলে রঙ তামাশা
বিবেক বোধের মরণ।


আকাশে উড়িছে সাদা মেঘের ভেলা
আমানিশার পরে  ভোর,
কত শত লোক রয়েছে দূৃর্দশায় ,
কে দেবে কারে খবর ?

দামি দামি বাড়ি ও গাড়ি
লক্ষ কোটি টাকার অলংকার ।
কি হবে তাতে  ,যদি নাইবা হলো ,
আর্ত মানবতার উপকার।

মানুষ যেখানে বানভাসি হয়ে ,
না খেয়ে কষ্টে  মরে ।
সেখানে তোমার বিলাস ব্যসনে 
কত না খরচ আহারে ।

ক্যাসিনো চালাও , জুয়া খেলে যাও
খুশিতে ভাসো জোয়ারে ।
পতিতা তোমার নিত্য সঙ্গী ,
কি সভ্য সমাজ আহারে !  

নেশার পিছনে কত মজা কে জানে , 
কে বলিবে কাকে ? 
সব হারাতে পারো এক নিমেষে  ,
চোখের পলকে ? 

ঈশ্বর শুধু চাহিয়া দেখিতেছে 
মানবতার লজ্জাজনক হার । 
নিতেছে পরীক্ষা আসিবে পালা 
 এইবার বুঝি তোমার ।   
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

গ্রাম্য জীবন

**********************
নিশি ভোর হয়ে এলো
শুকতারা  গেলো ডুবে ,
নতুন দিনের  আভাস 
দেখা দিলো পুবে । 

মাঠে মাঠে সোনা ধান 
সোনা ঝরা  দিন ,
আগামীর ভবিষ্যৎ 
করবে রঙিন । 

কৃষকের মুখে হাসি 
বুকে এলো বল , 
খোকা খুকু খেলে হাসে 
করে শোরগোল । 

শীতের বাতাসে পুবে
ভানু উঠে এলো ,
জেগে ওঠে পাখি সব
রাতি পোহালো।  

শিউলি ঝরা সকালে
শিশির ভেজা সুখ ,
সবাই সুখী , নেই কোথাও 
শহুরে অসুখ  । 

সিদ্ধ ধানের গন্ধে 
বাতাস সুবাসিত ,
প্রকৃতির র্‌প রস  
এখানে পরিমিত  । 
 
মুড়ি আর খেজুর রস 
গেলো মিলেমিশে ,
রসে ভেজা মুড়িগুলো 
ফোকলা দাঁতে হাসে।   

ছায়া সুনিবিড় চরাচর
যেন মায়াময় আভা  ,
স্নিগ্ধতা ছড়ায় এখানে 
দুইহাতে প্রভা । 

বিদঘুটে আওয়াজের 
নেই বাড়াবাড়ি ,
কৃত্রিম ব্যস্ততায় 
নেই তাড়াতাড়ি।  

কুয়াশার  আড়ালে 
লুকোচুরি খেলা 
খেলার নেশায় চলে জীবন
কেটে যায় বেলা। 

চলে গাড়ি ক্যাঁচকুচ 
গরু হলো বাহন 
গ্রাম্য জীবনের  
এইতো সাতকাহন ।   
+++++++++++++++++++++
অন্ধ দু'নয়ন  এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভাবনা  আক্ষেপ  এবং ভরসা  
********************************************************
পৃথিবীর আলো কেমন ? কখনো দেখিনি । 
মনেমনে প্রকৃতির ছবি আঁকতে পারিনি । 
শুনেছি ফুল সেতো অপরূপ সুন্দর ! 
গন্ধে ও স্পর্শে তারে ,ভরি মোর অন্তর ।। 

পাখী সে কেমন? কেমন চলার ধরণ ? 
কণ্ঠের মাদকতায়, সদা ব্যাকুল ,মোর মন । 
আকাশে ভেসে বেড়ায় নাকি উদাসী মেঘেরা ? 
অসীমের বক্ষে কি কাজ? কি করে তাহারা ?
চাঁদ শুনেছি তার রূপে করে অপরকে শোভিত ? 
দেখিতাম সে শোভা যদি বিধি মোরে দেখাইতো । 
আমিও হতে চাই ফুল , পাখি ও চাঁদের মতো 
ভুলে যেতে চাই পাওয়া না পাওয়ার বেদনা আছে যত শত শত । 
ভোরের রবি কিরণ  ,শুনেছি ..সে নাকি সোনামাখা রোদ ! 
জানিনা কবে হবে , এ পাপ  ,জনমের তরে শোধ !!  


কি কারণে সৃজিলা বিধি অন্ধ এ জনে 
কে জানে কি আছে বা ছিল তোমার নিজের মনে !
পথ নাকি অসীম ,পথের শেষ নাই 
মুক্ত পথে হাঁটবো চলবো , এই টুকুই তো চাই । 
যত রাগ সব কি  মোর তরে প্রভূ ঢালিছো যতনে ,
তাই বুঝি দাওনি আলো ,এই পোড়া দু নয়নে । 

কাটা ভরা এ জীবন বড়ই কষ্টকর 
কী দোষে দিলে বিধি এ জীবন মোর !! 
মানুষের করূণা আর উপহাসের পাত্র 
আর আমি হতে চাইনা কখনো বিন্দুমাত্র ।।  
কেন এত পরীক্ষা এত আয়োজন ।
কেন ?বিধাতা তুমি বলো কেন এ জীবন ? 

আশা দিলে  মনে তুমি ,পূরণ হবার নয় ,
চিরদিন এ পৃথিবী এক জটিল ধাঁধাই মনে হয় । 
গড়িলা এ পৃথিবী তুমি কত অপরূপ ।
আমার বেলায় কেন তুমি এতটা নিশ্চুপ ।
বলোনা বলো বিধি কী দোষ আমার ।
কার পাপে এ জনম, এ দায় ভার !! 

আমিতো আমারই নিজের নইকো আপনজন ,
ভাবিতে ভাবিতে সদা জলে ভরে অন্ধদু'নয়ন ।।  
এত কষ্ট আর তুমি দিওনা কাহারে ,
যত ব্যাথা তুমি এ জীবনে দিয়েছো আমারে ।। 
তবুও প্রভূ তোমাতেই আমার সকল ভরসা । 
তোমাতেই সব দুঃখ বেদন তোমাতেই সব আশা ।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন