শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

ভালোবাসার গল্প

টুপটাপ বৃষ্টি তে ভিজছে একটি কাক শাবক।মুখটা হাঁ করে রাখা আকাশের দিকে।
মাঝে মাঝে ঢোক গিলছে। কাকেরা কি ঢোক গেলে, হয়তোবা ।
সেভাবে জানিনা।গুগলে সার্চ দিলে হয় । ইচ্ছে করছেনা ।
টেবিলের উপর রাখা ফোনটা বাজছে...বাজুক...আজ মনটা ভালো নেই।কিছুক্ষণ আগে বউ সাথে হয়ে গেল এক চোট ঝগড়া।
মহা ঝগড়া।কয়েকটা কাচের প্লেট ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে এখনো ছিটিয়ে আছে।বউ কাদছে..।
ক্ষিদে পেয়েছে ...রান্না বান্না শেষ .।ইলিশ খিচুড়ি।দারুণ গন্ধ ছেড়েছে।ক্ষিদেয় যেমন করছে পেট চনমন, তেমনি জিভে আসছে জল।
আমিও কাক শাবকের মতো ঢোক গিললাম।
বঊ এর দিকে তাকালাম।হাসি পাচ্ছে..।কেন তা জানি না। মিচকি হাসি..।বউ এর ভাষায় ফাজিলের হাসি।হা হা হা।
বেহায়া বেশরম লাজ লজ্জা কিছু আছে? তীব্র বাক্যবান ।
কি হলো উত্তর দিচ্ছ না যে..
কি বলবো এনার্জি নেই ঝগড়া করার ।খিদে পেয়েছে।
আর কি পারো খাওয়া আর শোয়া ছাড়া।
একটু বেশি আদি রসাত্মক হয়ে গেল না ।লোকে শুনবে।
শুনুক বেশি করে শুনুক তোমার ভালো মানুষি মুখোশ খুলে পড়ুক।
প্লিজ একটু চুপ করবে ।
না, না, না ।অসুবিধা?
একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
নাহহহ.।
মেয়েটা কে ?
আমার অফিসের।
কতদিন চলছে এসব লটর পটর।
ছি কী ভাষা.।
তুমি করলে সমস্যা নেই আর আমি বললেই দোষ।
দেখো আবারো বলছি কোনো রকম বাজে ইঙ্গিত করবে না।জলি আমার হাঁটুর বয়সী।তোমার রুচি এত নিচে নেমে গেছে।
.......................................
জামা পড়ে পায়ে চটি গলিয়ে বেরিয়ে এলাম.।বউ আজ মহা ক্ষেপেছে।সহজে থামবেনা।আর জলিটাও  মাথা মোটা।
কেন যে বলতে গেল স্যার এই বরষায় আপনাকে খুব মিস করছি।মেয়েদের কান খুব খাড়া থাকে বিশেষ করে স্বামী যখন
ফোনে কথা বলে।
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
আমি হাটতে লাগলাম অসহায় ভাবে।
বেল বাজছে ।একবার দুইবার তিনবার আমি বাইরে থেকে শুনতে পাচ্ছি? ওরা কেউ শুনছে না কেন?
কি করছে সবাই?
ঝুম বৃষ্টিতে কী সবাই ঘুমাচ্ছে?
হঠাৎ লক খোলার শব্দ ।
মিতা তার স্বভাব সুলভ হাসি দিলো। 
-আরে দুলাভাই যে, কী খবর?এই ভর দুপুরে ?তাও বৃষ্টি মাথায়।আসুন একেবারে কাক ভেজা হয়ে গেছেন দেখছি।
-মুবিন নাই।
-মুবিন কে কী দরকার? আমাকে পছন্দ হচ্ছেনা ?হিহিহি। ভেতরে আসুন।মুবিন দিবা নিদ্রা দিচ্ছে।
-সরি ডিসটার্ব করলাম মনে হয়।
-আরে না আপনার মতো নাকি? আমরা ভর দুপুরে ওসব করি না।
-মানে?.।যা হোক ,খেতে দাও তো, খুব খিদে পেয়েছে।বিনা দাওয়াতে তোমার বাডিতে আজ খাব।
-বউ খেতে দেয়নি? 
-তুমি খেতে দেবে কিনা বল?আজ তোমার হাতের রান্না খাব ।অসুবিধা?
-না না,কি অসুবিধা। আপনি এলে তো ভালোই লাগে ।ঝটপট ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসুন ।বাবুও খেতে বসেছে।খেতে খেতে কথা বলি আমিও খাব ,আসুন।
মিতা প্রতিটা  কাজ চটপট ঝড়ের গতিতে করতে পারে।তার হাতের রান্নাটা ও বেশ আমি খেতে বসলাম।
মিতার ছেলেটা বেশ শান্ত ।সাধারণত এই বয়সের বাচ্চারা খুব দুষ্টু হয়।ও বেশ গোছানো স্বভাবের।চুপচাপ খেয়ে দেয়ে ও ঘরে চলে গেল।
আজ মিতা কথায় কথায় হাসছে।
-কি ব্যাপার আজ খুব মুডে আছো মনে হচ্ছে?
-তাই নাকি?তো দুলাভাই কী খবর ?কেমন চলছে?
-কোন খবর নেই। 
-এটা কিন্তু ঠিক বলেলেন না।চেপে যাচ্ছেন?
-কী?
-আপনি নাকি সেক্স সিম্বল হয়ে গেছেন।প্রেম ট্রেম করে বেড়াচ্ছেন।যাকে বলে বিশ্বপ্রেমিক ।
-কে বলেছে তোমার আপা?
-যেই বলুক সেটা কথানা ঘটনা কী সত্য?
আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।
এই ব্যাপারে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
কেন?ও আপনি পিরীত করে বেড়াবেন লুচ্চামি করবেন আর আমরা বল্লেই দোষ?
এসব কী ভাষা?প্লীজ একটু থামবে।
-জলি মেয়েটা কেমন?খুব সুন্দরী?কত দিন ধরে চলছে এসব ফস্টিনস্টি?
-এসব কে বলেছে?
-কে বলেছে ইমপটেন্ট না ঘটনা সত্য কিনা বলেন। ঘটনা সত্য হলে তো পরিস্থিতি ভয়াবহ।আপনি কী বূঝতে পারছেন?নাকি ,না বোঝার ভান করছেন?
-আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
আমি চুপচাপ খেতে চেষ্টা করলাম খেতে ইচ্ছা করছে না।..বমি আসছে..গা গুলাচ্ছে।আজকের দিনটা খুব বিচ্ছিরি।আমার মাথা ধরে গেছে।কী আশ্চর্য ! আমি কড়া প্রতিবাদ করতে পারছিনা কেন?আমি কাউকে বোঝাতে পারছি না কেন?
বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু আকাশ বেশ ভারী। এখন রাস্তা ধরে হাটছি। খিদে ভাবটা নেই।আমি আবার খাবারের কষ্ট সহ্য করতে পারি না।বিকাল গড়িয়ে গেছে ।গাছের নিচে সিটি করর্পোরেশনের  বেঞ্চ দেখে বসে পড়লাম।চটি খুলে দিব্যি বাচ্চা মতো পা দুলাতে লাগলাম।মজা লাগছে।গাড়ির প্যাঁ প্যোঁ আওয়াজ। অচেনা সব লোকজন।অদ্ভুদ সব আওয়াজ।
-কিরে কী খবর ?
আমি ঘাড় বেকিয়ে তাকালাম।খুব একটা চেনা মনে হলোনা।আবার মনে হলো চিনি।
-ভালো।শুকনো মুখে বললাম।
-চিনতে পারছিস।মনে তো হচ্ছেনা।মুখ দেখে মনে হচ্ছে পেট কামড়াচ্ছে।মেয়ে মানুষে তোর এলার্জি আছে নাকি?
আমি মাথা নাড়লাম।
-নাহ।
-চিনবি কী করে? এখন তো আমি অনেক সুন্দর হয়ে গেছি।পার্লার আছেনা।জীমে যাই।ফেসিয়াল....। সে যাই হোক।তোর খবর বল?
_আমি আসলে এখনো আপনাকে..।
-চিনতে পারিনি তাই তো।
-ঠিক।
-আরে ব্যাটা ফাজিল আমি সেই আটার বস্তাজলি।
ভিমরি খাবার মতো অবস্থা আবার জলি? এক জলিকে নিয়ে আমি জ্বলে পুড়ে মরছি ।এ যে দেখি আরেক জলি।চারিদিকে এতো জলি আসছে কোথা থেকে।
আমি দাঁত বের করে নকল হাসি হাসলাম।হ্যাঁ হ্যাঁ চিনেছি চিনেছি কেমন আছো?
-দোস্ত এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা।
-কি ঠিক হচ্ছেনা?
-এই যে তুই তুমি তুমি করে বলছিস।তোর আমার সম্পর্ক  তুই তাকারির।তুই করে বল।
-না মানে তুই.
-কেমন ম্যাদা মার্কা হয়ে গেছিস রে তুই।বিয়ে করেছিস?
-হু।
-হু কিরে?  আর  রাস্তার বেঞ্চে বসে কী করছিস ? চাকরি গেছে? না বউ বকেছে?
আমি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম।-না না সেরকম কিছু না।
-বউ দেখাবি না? চল তোর বাড়িতে যাই ।রাস্তায় এভাবে দাড়িয়ে কথা বলা যায় নাকি?আমার সাথে গাড়ি আছে। চল চল।
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না ।ভয় লাগছে ।অদ্ভুদ একটা সিরসিরানি অনুভূতি।এর পর কি হবে ?আজ এসব কী হচ্ছে?
জলি আমার হাত ধরলো ।আমি যন্ত্রের মতো হাটতে লাগলাম।  


যেতে যেতে আমি জলিকে কি বলবো বুঝতে পারছিনা। মানা্ও করতে পারছি না। কি করে বোঝাবো কী কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি।
আর কাউকে কি বলা যায় এখন আমার বাসায় যাওয়া যাবে না ।আমার বউ বকবে বা এধরনরে কিছু....দ্রুত ভাবতে হবে ...আমার সিচুয়েসন ম্যানেজ করার  অসম্ভব দক্ষতা আছে, কিন্তু আজ কোন কিছুতে কিছু কাজ হচ্ছেনা । পরিস্থিতি আমার হাতের বাইরে।অসহ্য ব্যাপার...
-কি রে কি ভাবছিস ?
-না তেমন কিছু না ...আসলে একটা কথা বলার ছিল । 
-বল ,এমন দ্বিধা করছিস মনে হচ্ছে প্রেম নিবেদন করবি।
-আসলে বউ এর সাথে আমার খুব ঝামেলা চলছে।
-কি নিয়ে ?কবে থেকে?
-না না মানে আজ .....
-মিটিয়ে নে।বউ থাকলে তো ঝামেলা হবেই...বউ মানেই ঝামেলা......
-আমার বউ  সে রকম না ঝামেলা  টামেলা করে না কিন্তু একটা প্রবলেম হয়ে গেছে ।
-কি প্রবলেম ?সিরিয়াস কিছু ?
-অফিসের আমার একজন কলিগ আছে নাম জলি ।
-জলি ?ইন্টারেসটিং  আমার নামে নাম ।তারপর।
-মেয়েটা একটু পেছন পাকা টাইপের ,ফাজিল টাইপের বলতে পারিস।কথায় কথায় লেগ পুলিং করে । বেফাস কথা র্বা্তা বলে । আমি অবশ্য প্রশ্রয়ও দেইনি আবার মানাও করিনি । বরং  মজাই লাগতো। কিন্ত এসব কথা বউ কানে চলে গেছে..
- ও আর তু ই বউ এর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস হা হা হা ।
-আরে না ধ্যাৎ ।
-তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?
-কে অশান্তি চায় বল? আর আমার বউ খুব ভালো মানুষ টাইপের ।সহজে রাগে না .একেবারে মাটির মানুষ । তবে রেগে গেলে আমি সামলাতে পারি না ।
-ভালো তো।
আর বউকে আমি খুব ভালো বাসি....খারাপ লাগছে খুব ,কি যে করবো কিছু বুঝতে পারছিনা।
-কুচ পরোয়া নেই চল  দেখি কি করা যায়।
গাড়ি এগিয়ে চলছে দুরন্ত গতিতে ।সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ।আমরা অনেক জায়গা ঘুরলাম। অনেক দিনের জমানো অনেক কথা শেয়ার করলাম । আর মাঝে মাঝে  উল্লেখ করতে লাগলো তুই আমাকে চিনতে পারিসনি আমি কিন্তু তোকে ঠিকই চিনেছি ।অবশেষে অনেক পথ ঘুরে বাসার সামনে গাড়ি থেকে নামলাম । বড্ড বেশি চুপচাপ চারপাশ। গাড়ি থেকে নেমে জলি আমার দিকে তাকালো ..
-তোদের পাড়াটা বেশ চুপচাপ তো। এই বাড়িটা ? কয় তালায় ?
-তিন তালায়।
আমরা সিড়ি  ভাঙতে লাগলাম । দোতালার সিড়িতে পা দিতে জলি আমার হাত টা ধরলো । আমি একটু অবাক হলাম ।
-কি রে?
-এই গুলো ধর ।
 আমি জলির হাতের উপহার এবং ফুলগুলি ধরলাম । এগুলো সে পথের মাঝে গাড়ি থামিয়ে কিনেছে ।হঠাৎ সে বলল
-আমি এখন আসি।
-কেন কি হয়েছে?
-কিছুনা ।এগুলো বউ এর জন্য নিয়ে যা, সরি বল।ছোট ছোট ভুল গুলো শুধরে নে, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।আজ আমি যাব না রে।আজকের দিনটা তোদের একান্ত নিজের হোক। মান অভিমান কাটুক ।তারপর একদিন আসা যাবে। আসলে এখনকার এই অস্থির সময়ে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখাটা খুব জরুরি।
 জলি আস্তে আস্তে সিড়ি ভেঙে নিচে নামতে লাগলো ।এক সময় ও আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো ।আজও ও আমার খুব ভালো বন্ধু।জলির প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার চোখ ভিজে গেল। আমি চোখ মুছে ডোর বেল বাজালাম। এখন মনটা হালকা লাগছে।.......[সমাপ্ত]












কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন