বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০

গল্পঃ ডায়েরীর পাতা থেকে ১

অন্যবার আমি খুব একটা রোজা রাখিনা। স্কুল খোলা থাকে বিশ বাইশ রোজা পযর্ন্ত ,রোজার মধ্যে রোজা রেখে স্কুল, টিউশনি, কোচিং চালিয়ে নেয়া খুব কষ্টকর হয় আমার জন্য। 

তাছাড়া খিদে পেটে মেজাজ ধরে রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। এবার কিন্তু সব  হিসেব বদলে দিয়েছে করোনা ভাইরাস।প্রথম থেকেই সবগুলো রোজা আছি এখন পর্যন্ত। যা হোক দেখি কয়টা রোজা রাখতে পারি। খুব বেশি পারবোনা সেটা আমি ভালোই জানি কারণ আমি খিদে খুব একটা সহ্য করতে পারি না। এটা একটা অযুহাত হয়তো কিন্তু এই অযুহাত দেখিয়ে রোজা রাখায় বিরতি দিয়েছি বহুদিন।  

আর সত্যি কথা বলতে আমি একজন গান, মুভি, বই পাগল মানুষ। আমার কাজের বাইরে অবসরগুলো কাটে এগুলো নিয়ে সাথে আবার বাগানেরও শখ আছে। বেশ কেটে যায় সময়। ভালো লাগে খুব ভালো লাগে। আর বাকীটা সময় বাচ্চাদের সাথে কাটাতে আমার খুব ভালো লাগে।   

সামাজিকভাবে আমি একজন অসামাজিক ব্যক্তি। বেশি লোকের সাথে মিশতে পারি না কোন দিনই।কারো বাড়ি যাই না খুব একটা। বিয়ে জন্মদিন এসব সাধারণত এড়িয়ে চলি।সবচেয়ে বড় কথা কারো সাথে একটা সম্পর্ক আমি বেশিদিন আমি টেনে নিয়ে যেতে পারিনা । আমি জানি এটা আমার দূর্বলতা ও ব্যর্থতা।কিন্তু এও জানি সবমানুষ এক রকম হয় না। আমি না হয় ব্যতিক্রমই হলাম।   

অনেক সময় দেখা গেলো কেউ আমাকে বেশি রকমের আপন করে চাইছে। আমি নিজে থেকে সেখান থেকে সরে গেছি হঠাৎ করেই তাকে খানিকটা আহত করে। অভিমানি বালকের মতো। আসলে আমার অভিমানটা বরাবরই বেশি।সেই কারনে আমার জীবনে বন্ধু বা আত্নীয় স্বজন কারো সাথেই সম্পর্ক আমার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। একে কি দুঃখ বিলাস বলে? হয়তো।  

অনেক সময় আমার আমিকে খুব স্বার্থপর মনে হয়।কে জানে? এতশত গভীর ভাবে ভাবিনি কখনো।আর ভাবনার সময়ইবা কই।যখন যা মনে আসে তখন তাই করি। মা ভালো বলতেন তোর কপালে ভবিষ্যতে সীমাহীন দুঃখ লেখা আছে। মা ভাগ্য গননা করতে পারতেন কিনা জানিনা তবে মায়ের কথা অনেকাংশে ফলে গেছে। তবে আমি সেই সমস্ত দুঃখগুলোকেও কৌশলে আয়ত্বে এনেছি। তাকে উপভোগ করেছি। আসল কথা হলো সুখ ও যেমন আমি উপভোগ করি দুঃখও তেমনি উপভোগ করি। ব্যপারটা মজার না? 

সবসময় আমার মনে হয় খামাখা খামাখা শোকতাপ করে কোন লাভ আছে নাকি?জীবন তো দুদিনের।বাঁচলে হেসে খেলে বাঁচতে হবে।
 
যা হোক আজ সেহেরি খেয়ে আযান দিতেই প্রার্থনা সেরে ঘুমিয়ে পড়ি অন্য দিনের মতো।অনেকখানি বেলা হলেও আমার ঘুম ভাঙেনি, যখন ভাঙলো তখন কড়কড়ে রোদ উঠে গেছে । জানালা বেয়ে পুরো রোদ আমার মুখে। মুখটা গরম হয়ে উঠতেই আমি ঝটপট ঠেলে উঠি। বাইরে তখন দারুন রোদ ঝলমলে আকাশ। হালকা বাতাস বইছে চারপাশে। মানুষ বা অন্যান্য যান্ত্রিক শব্দের কোন বাড় বাড়ন্ত নেই্ বেশ প্রশান্ত চারপাশটা। 
খুব ঝরঝরে লাগছে নিজেকে।   

আমি ব্যলকনিতে চেয়ার পেতে আরাম করে বসলাম। আমার ব্যলকনি ঘেসে চমৎকার একটা দিঘী আছে। দীঘির নামটা বেশ সুন্দর নামটা হলো পন্ডিত পুকুর। বেশ আগে এ এলাকা শ্মশান  ঘাট ছিলো। এখন অবশ্য তার কোন চিহ্নই নেই চারপাশে সব বিশাল বিশাল বাড়ি। কালের আবর্তে সব হারিয়ে পুকুরটাই নীবর সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে। 
জল টলমল দীঘি আমার বরাবরই আকর্ষণ করে।  

সামনে খোলা নীল আকাশ। রোদটাও বেশ সহনীয়।আকাশের নীল আমায় মুগ্ধ করে । গাছের চকচকে পাতা আমায় মুগ্ধ করে। জলের টানে আহারের খোঁজে অনেক পাখী আসে এখানে ।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি চোখ মেলে, উপভোগ করি পাখীদের দুষ্টুমি আর ওড়াওড়ি।  
 
কত রকমের পাখীযে আসে পানকৌড়ি মাছরাঙা, দাঁড়বক,কুঁজ বক।এরা সবাই মাছের লোভে আসে।কেউ কচুরিপানাতে লুকিয়ে থাকে কেই গাছের পাতার ফাকে লুকিয়ে থাকে। শিকার ধরবে বলে। এই সব পাখীদের লুকোচুরি খেলা আমার বেশ লাগে। মাঝে মাঝে যখন লোভী শিকারী আসে ওদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে আমার খুব খারাপ লাগে।  বুকটা ভেঙে যায়। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারি না। ওরা নেতা টাইপের লোক।আমি ছাপোষা সাধারণ মানুষ। পরে আমার না কোন ক্ষতি করে দেয় তারা।এদেশে এই শ্রেনি লোকেদের কদর বেশি। যা হোক এসব কথা বলে লাভ নেই। 

এছাড়াও বিভিন্ন পাখী আসে চড়ুই, টুনটুনি, দোয়েল তো আছেই আরো আসে ফিঙে, টিয়া বুলবুলিরাও।   

চড়ুইগুলো বড্ড দুষ্টু। শুধু কিচির মিচির করে। দোয়েল শিষ দেয় মধুর স্বরে ।কখনো কখনো আবার ঘুঘুও ডেকে ওঠে। ঘুঘুর ডাক সবসময় মন কেমন করে।
 
একটা পানকৌড়ি আমার বন্ধু ছিলো প্রতিদিন ওকে দেখতে দেখতে কেমন যেনো মায়া জন্মে গিয়েছিলো ওর প্রতি।ওর ডুব সাঁতার, ডুব দিয়ে শিকার ধরা,রোদে গা শুকানো। গা শুকানো হয়ে গেলে নিজেকে পরিপাটি করে সাজানো ।

 সাধারণত পানকৌড়িরা সবাই এক রকমের দেখতে হয়। একে আমি চিনতাম আলাদা করে কারণ এর গলার কাছে সাদা কিছু পালক ছিলো যা অন্যদের থেকে একে সহজেই আলাদা করা যেতো । 

আজ কদিন পানকৌড়িটা আসছে না।ওকে না দেখতে পেরে আমার খুব মন খারাপ হয়। কি হয়েছে কে জানে কোন দিন হয়তো জানাও যাবে না ।হয়তো অসুখ করেছে বা কোনো শিকারীর শিকার হয়েছে। লোভী মানুষের তো পৃথিবীতে অভাব নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন